যে কোনও ব্যবসায় অগ্রগতি আশা করা যায়। মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের কর্মের প্রয়োগ পদ্ধতি নিয়ে সমস্যা হতে ... বিশদ
শ্রীউদ্ধবকে ভগবান ‘সৌম্য’ বলিয়া সম্বোধন করিয়াছেন। তাঁহার মূর্ত্তিখানিই শান্তরসময় স্নিগ্ধতায় ভরা। বহু অশান্তির মধ্যেও কেহ উদ্ধবকে দর্শন করিলে তাহার চিত্তে উদয় হয় বিপুল শান্তি। দুঃখে, আপদে অপরকে সান্ত্বনা দিবার সর্ব্বতোভাবে যোগ্যজন এই প্রকার ব্যক্তিই।
“সৌম্য” সম্বোধন করিয়া শ্রীকৃষ্ণ আদেশ করিলেন উদ্ধবকে ব্রজে যাইতে। “উদ্ধব, তুমি ব্রজে যাও, তথায় গিয়া আমাদের পিতামাতা ব্রজেশ্বর ব্রজেশ্বরীর প্রীতিবিধান কর।” পিতামাতার কথা বলিবার জন্য শ্রীকৃষ্ণ বলিয়াছেন “আমাদের পিতামাতা” (পিত্রোঃ নঃ), বস্তুতঃ নন্দযশোদা উদ্ধবের পিতামাতা নহেন। তথাপি এরূপ শব্দ প্রয়োগ করিয়া শ্রীকৃষ্ণ উদ্ধবকে বলিতে চাহিতেছেন যে, উদ্ধব, তুমি যখন আমার প্রিয়সখা, তখন আমার পিতামাতা তোমারও পিতামাতা। এই কথায় শ্রীকৃষ্ণের ব্রজের পিতামাতার প্রতি গভীরতর হইয়া উঠিল উদ্ধবের শ্রদ্ধা।
বৃন্দাবনের পিতামাতার বাৎসল্যস্নেহের উপমা নাই অনন্ত বিশ্বে। শ্রীকৃষ্ণের মহা মহা ঐশ্বর্য্যেরও ক্ষমতা নাই তাঁহাদের হৃদয়ে কৃষ্ণসম্বন্ধী পুত্র-বুদ্ধি ক্ষুণ্ণ করিয়া ঈশ্বরবুদ্ধি জাগায়। ঐশ্বর্য্যই ভগবত্ত্ব। সেই ভগবত্ত্বও ছোট হইয়া যায় নন্দযশোদার প্রেম-মহত্ত্বের দুয়ারে। তাঁহারা কেবল পুত্রকে লালন-পালনই করেন নাই, তাড়ন, ভর্ৎসন, বন্ধন পর্য্যন্ত করিয়াছেন। ঈশ্বরত্ব হইতেও গরীয়সী এই স্নেহগাঢ়তা তুলনারহিত।
একটি মুহূর্ত্ত শ্রীকৃষ্ণ-বিরহ তাঁহারা সহ্য করিতে পারেন না। একথা শ্রীকৃষ্ণ জানেন। তবু আজ এতদিন আছেন তাঁহাদিগকে ছাড়িয়া মথুরায়। তাঁহাদের নিদারুণ অবস্থা স্মরণ করিয়া অন্তরে মর্ম্মঘাতী বেদনার অনুভবে তাই কহিলেন উদ্ধবকে, তাঁহাদের অন্তরে কিঞ্চিৎ সুখের বিধান কর, কোনও প্রকারে (প্রীতিমাবহ)। শ্রীকৃষ্ণ যখন মথুরায় আসেন, তখন পিতা নন্দ তাঁহার অনুসরণ করিয়াছিলেন। কংসাদি বধের পর শ্রীকৃষ্ণ পিতাকে বিদায় দেন এই কথা বলিয়া—
“জ্ঞাতীন্ বো দ্রষ্টুমেষ্যামো বিধায় সুহৃদাং সুখম্”/ হে পিতঃ! আমার সুহৃদ্ যাদবগণের সুখসম্পাদন করিয়া আবার ব্রজের আত্মীয়স্বজনদের দেখিতে যাইব। পুত্রের এই প্রতিশ্রুতি-বাক্য হৃদয়ে ধরিয়া নন্দযশোদা মহাদুঃখের মধ্যেও ধৈর্য্যে বুক বাঁধিয়া আছেন। শ্রীকৃষ্ণের ত’ এখন উপায় নাই ব্রজে যাইবার—তাই বলিতেছেন উদ্ধবকে এমন প্রবোধবাক্য তাঁহাদিগকে কহিবার জন্য, যাহাতে তাঁহাদের বেদনাহত চিত্তে কিঞ্চিৎ সুখোদয় হয়। পিতা-মাতার কথা বলিয়া শ্রীকৃষ্ণের ব্রজের গোপিকাদের কথা বলিতেছেন উদ্ধবকে। গোপীদের হৃদয়ভরা তীব্র পীড়া আমার বিরহজনিত “মদ্বিয়োগাধিং”, তাহা দূর করিবে আমার বার্ত্তা দিয়া। “মৎসন্দেশৈঃ”—‘আমার সন্দেশ’ কথাটির নানাবিধ হার্দ্দ হইতে পারে।