পেশা ও ব্যবসায় অর্থাগমের যোগটি অনুকূল। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ... বিশদ
উপদেক্ষ্যন্তি তে জ্ঞানং জ্ঞানিনস্তত্ত্বদর্শিনঃ।।
নিজেকে কর্মের দ্বারা, যজ্ঞের দ্বারা সুসংস্কৃত করে, নিজেকে পবিত্র করে তুমি তাঁর কাছ থেকে সেই জ্ঞানলাভ করো। উপনিষদ পাঠ করলে দেখা যায়, বার বার সেই একই উপাখ্যান। আচার্যের গৃহে গিয়েছেন শিষ্য জ্ঞানলাভের জন্য, আচার্য বার বার তাকে বলছেন তুমি তপস্যা করো। আরও ষোল বছর, আরও বত্রিশ বছর তপস্যা করো। এই রকম তপস্যাই শুধু করে যাচ্ছেন, ‘ভূয় এব তপস্যা,’ আর আপনা আপনি তার মধ্যে সেই জ্ঞান প্রস্ফুটিত হচ্ছে। একবার আচার্য শিষ্যকে বাড়িতে রেখে বাইরে গিয়েছেন, বলে গিয়েছেন, বাড়িতে এই অগ্নি আছে, তুমি সকাল-সন্ধ্যে সেই অগ্নির পরিচর্যা করবে, অর্থাৎ নিয়মিতভাবে যজ্ঞ করে যাবে। শিষ্য নিষ্ঠার সঙ্গে সেই আদেশই পালন করেছে। যখন ফিরে এলেন আচার্য, তখন শিষ্যের মুখের দিকে চেয়ে তিনি বলছেনঃ “ব্রহ্মবিদ্ ইব ভাসতে তে মুখম্,” কী ব্যাপার? তোমার মুখ যে ব্রহ্মবিদের মতো উজ্জ্বল ভাস্বর হয়ে উঠেছে। জ্বলজ্বল করছে যেন তোমার মুখখানি! শিষ্য বললেন: ‘হ্যাঁ, অগ্নিই আমাকে পরম জ্ঞান দান করেছেন।” সুতরাং এই অগ্নির সেবায়, এই যজ্ঞের দ্বারা নিজে পবিত্র হলে, আমার মধ্যে যে জ্ঞান রয়েছে মালিন্যের দ্বারা ঢাকা, সেটি আপনিই প্রস্ফুটিত হবে। তাই ভগবান উপসংহারে চতুর্থ অধ্যায়ে আবার শুনিয়ে দিলেন:
তস্মাদজ্ঞানসম্ভূতং হৃৎস্থং জ্ঞানাসিনাত্মনঃ।
ছিত্ত্বৈনং সংশয়ং যোগমাতিষ্ঠোত্তিষ্ঠ ভারত।।
ওঠো, তুমি যোগ অনুষ্ঠান করো, সংশয়কে ছেদন করো অসির দ্বারা। কোন্ অসি? জ্ঞানরূপ অসির দ্বারা। এই জ্ঞানরূপ অসির দ্বারা সংশয়কে ছিন্ন করে তুমি যোগে প্রতিষ্ঠিত হও, যোগে ব্রতী হও, মানে, সমস্ত শক্তিকে কেন্দ্রভূত করো, সত্তাকে গুটিয়ে আনো। নিজেকে ছড়িয়ে ফেলেছ বিশ্বের মধ্যে, নিজেকে হারিয়ে ফেলেছ dissipation, diffusion-এর ফলে, এখন সেই হারানো সত্তাকে আবার ফিরে পাবার জন্য নিজেকে গুটিয়ে আনো, গুটিয়ে এনে ঐ যে একটি কেন্দ্র রচনা করেছ, সেই কেন্দ্র অভিমুখে সব ক্রিয়া, সমস্ত চেষ্টাকে নিয়ে যাবার জন্য প্রয়াসী হও, একমুখী করো তোমার বহুমুখী সব প্রবৃত্তিকে integration বা fusion-এর দ্বারা সমন্বয় ও সম্মিলন সাধন দ্বারা। হিন্দু-সাধনার মধ্যে কোনো জায়গায় জটিলতা নেই, সব তো সহজ সরল জিনিস। তার মধ্যে শুধু অনেক জটিলতা আমারই সৃষ্টি করি এবং সৃষ্টি করে মূল লক্ষ্য থেকে নিজেদের বিভ্রষ্ট করে রাখি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের মধ্যে, সমাজ-জীবনের মধ্যে এই সাধনকে ঋষিরা তখনকার দিনে চালু করে দিয়ে গিয়েছিলেন। যা-কিছু কর্ম করছ, সেই কর্ম করবার আগে বিষ্ণুস্মরণের ব্যবস্থা ছিল, আহার করবার আগে আচমন করবার ব্যবস্থা ছিল, কিছু নিবেদন করবার ব্যবস্থা ছিল, কিংবা প্রত্যেক বাড়ীতে গৃহদেবতা থাকতেন, পঞ্চব্যঞ্জনাদি যা-কিছু রান্না হত নিবেদন করা হত এবং সেই নিবেদিত অন্ন প্রসাদরূপে সকলেই গ্রহণ করতেন।
গোবিন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়ের ‘গীতার কথা’ থেকে