গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
শ্রীঠাকুর সত্যানন্দ বলেছেন—পাশ্চাত্ত্য মনোবিজ্ঞান মতে বিশ্বাস বলতে বোঝায় Belief এবং Faith। Belief বলতে চিন্তার উপর জোর দেওয়া হয় (cognitive side বা চিন্তার দিক) এবং Faith বলতে ক্রিয়ার ওপর জোর থাকে (conative side বা ইচ্ছার দিক)। গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন— যিনি শ্রদ্ধাবান্ একনিষ্ঠ বা তৎপর এবং জিতেন্দ্রিয় তিনি জ্ঞান লাভ করেন। জ্ঞান লাভের ফলে পরাশান্তি লাভ করেন। ‘শ্রদ্ধাবান্ লভতে জ্ঞানম্’ ইত্যাদি শ্লোকার্থ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শ্রীঠাকুর সত্যানন্দ বলেছেন—“শ্রদ্ধা শব্দের অর্থ আস্তিক্য বুদ্ধি। ভগবৎ অস্তিত্ব সম্বন্ধে যিনি বিশ্বাসবান তিনিই শ্রদ্ধাবান। সমস্ত হিন্দুদর্শন বা হিন্দু ধর্মেই এক বিরাট চৈতন্য সত্তা স্বীকৃত হয়েছে। পাশ্চাত্ত্য বিজ্ঞানেও cosmic energy স্বীকৃত হয়েছে, আমরা তাকেই বলবো ভগবৎশক্তি। জ্ঞান লাভের জন্য চাই শ্রদ্ধা—একথা আমরা পাশ্চাত্ত্য মনোবিজ্ঞান এবং তর্কবিদ্যা বা Logic-এও পাই। Knowledge is ordinarily defined as a system of ideas correspondent with a system of things outside and involving a belief in that correspondence. কাজেই দেখা যাচ্ছে জ্ঞানার্জনের পথে বৌদ্ধিক, বিচার, প্রত্যক্ষ অনুভূতি, Verification বা যাচাই করা ইত্যাদি ছাড়াও, বিশ্বাস হচ্ছে একটি বিশেষ দিক। All knowledge is belief, Though all belief is not knowledge, কাজেই গীতায় ভগবানের এই কথার সঙ্গে পাশ্চাত্ত্য দর্শনের ও মনোবিজ্ঞানের মিল রয়েছে। কেন না সেখানেও uniformity, identity, contradiction ইত্যাদিকে বিশ্বাস করতেই হয়।”
আবার পরের শ্লোকে আরও জোর দিয়ে বলেছেন— ‘অজ্ঞশ্চাশ্রদ্দধানশ্চ সংশয়াত্মা বিনশ্যতি।’ অর্থাৎ আস্তিক্যবুদ্ধিহীন সংশয়াত্মা বিনাশ প্রাপ্ত হয়। ঠাকুর সত্যানন্দ এ প্রসঙ্গে বলেছেন—‘যারা শাস্ত্রোপদেশ, গুরুর উপদেশ ও সৎবাক্য শুনেও গ্রহণ করে না, এবং ভগবৎ তত্ত্বে যাদের বিশ্বাস নাই, তারা অশ্রদ্ধাযুক্ত। আর অজ্ঞ অর্থাৎ যারা জানে না। অশ্রদ্ধাযুক্ত আর অজ্ঞ এ দুটির মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে— একটি positive ignorance অর্থাৎ ইচ্ছাকৃত অবিশ্বাস, অপরটি negative ignorance অর্থাৎ অজ্ঞতা ইচ্ছাকৃত নয়, তার মধ্যে জানার অভাব রয়েছে। কিন্তু অজ্ঞতাও অপরাধ। বিরাট বিশ্বের স্রষ্টা ভগবানকে না জানাও বিশেষ অপরাধ। দেশের যে সমস্ত আইন সেগুলি, কেউ যদি না জেনে ভঙ্গ করে, তাহলেও আইন অনুসারে তার সাজা হয়। ঠিক তেমনি গীতামুখে ভগবান বলেছেন— জেনে হোক না জেনে হোক, ভগবৎসত্তাকে অশ্রদ্ধা করলে বিনাশ ঘটবে। এখানে বিনাশ অর্থে আধ্যাত্মিক উন্নতির বিনাশ। অর্থাৎ তার এলোক বা পরলোক কোথাও শান্তি নেই।