মেয়াদি সঞ্চয় থেকে অর্থাগম যোগ আছে। সন্তানের আবদার মেটাতে অর্থ ব্যয়। ধর্মকর্মে মন আকৃষ্ট হবে। ... বিশদ
স্বামীজী মহারাজ: ‘তাতে আর বোঝাবুঝি কি। বুঝ্বেই বা কে, আর বোঝাবেই বা কাকে? বুঝ্বে যা দিয়ে, তাই তো তুমি। You cannot get behind conciousness (তুমি জ্ঞানের বাইরে বা জ্ঞানকে অতিক্রম ক’রে যেতে পারো না), জ্ঞানকে জ্ঞান দিয়েই বুঝ্বে বা লাভ করবে। জ্ঞানকে অতিক্রম ক’রে বা বাদ দিয়ে কোনদিনই জ্ঞান লাভ করতে পারবে না। তিনি (ব্রহ্ম বা ঈশ্বর) জ্ঞানস্বরূপ। তুমিও তাই। জ্ঞান স্বতঃপ্রকাশ। জ্ঞান তার প্রকাশের জন্য অন্যকিছুর সাহায্যের অপেক্ষা রাখে না। আলোকে জানার জন্য আর আলোর দরকার হয় না। তাই সাধন-ভজন ক’রে যেতে হয়, কবে জ্ঞান লাভ করবে এ’রকম ক’রে ক্ষতিয়ে দেখ্তে নেই। সাধন-ভজন তো আর আলু-বেগুনের ব্যবসা নয় যে, ক্ষতিয়ে দেখ্বে লাভ হ’ল—কি লোকসান হ’ল? সাধন-ভজনের বেলায় লাভ-লোকসান যদি হয় তা একমাত্র সাধকের নিজের গুণের বা দোষের জন্য হয়। নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করলে সিদ্ধিলাভ নিশ্চয়ই হবে, আর লোকদেখানো জপ-ধ্যান করো তো নিজে ফাঁকিতে পড়্বে। তাই সাধন-ভজন ক’রে যেতে হয়, আর চিন্তা করতে হয় কতটুকু আন্তরিকতার সঙ্গে করছ, কতটুকু তোমার মন উদার ও সংস্কারমুক্ত হয়েছে, পরের দোষদর্শন না ক’রে কতটুকু সকলের গুণদর্শনের দিকে তোমার দৃষ্টি যাচ্ছে, নিজেকে যেমন ভালবাস তেমনি কতটুকু অপর সকলকে তুমি ভালবাস, কতটুকু স্বার্থবুদ্ধি ও সংকীর্ণতা তোমার ভিতর থেকে দূর হয়ে গেছে—এই সব। এগুলোই তো খতিয়ে দেখার ও বিচার করার জিনিস, নইলে সাধনভজনও করছ, আর মনের মধ্যে কুসংস্কারগুলোকে জাগিয়ে রাখছ, এতে কিছু হবে না। তাই সাধন-ভজন করার সময়ে একান্তই যদি জান্তে চাও কবে তোমার সিদ্ধিলাভ হবে, তাহলে একথাই মনে রাখ্বে যে, মনের সকল সংস্কাররূপ অজ্ঞান যে’দিন দূর হবে, সে’দিনই তোমার সিদ্ধি লাভ হবে। মনে সঙ্কীর্ণতা থাক্বে আর ঈশ্বর লাভ করবে—এ’ কখনও হয় না’।
‘শঙ্করাচার্য ঠিক এ’ধরণের কথাই বলেছেন যে, জ্ঞানলাভ করার অর্থ অজ্ঞান দূর করা। আলোর প্রকাশ চিরকালই আছে, অজ্ঞানরূপ আবরণের জন্যই অন্ধকার। তাই অন্ধকার দূর করার জন্য যেমন আলোর দরকার, অজ্ঞান দূর করার জন্য তেম্নি আত্মতত্ত্ববিচার দরকার। ব্রহ্মজ্ঞান সর্বদাই আছে ও তা’ স্বপ্রকাশ, সুতরাং তাকে সাধন-ভজন দিয়ে আর কি লাভ করবে বলো। যা নেই তাকে পাওয়ার জন্যই চেষ্টা ও সাধনা, কিন্তু যা সর্বদাই আছে তাকে পাওয়ার জন্য কি আর চেষ্টা করবে বলো। অজ্ঞাননাশের সঙ্গে-সঙ্গেই জ্ঞানের প্রকাশ হয়’।
আমরা: ‘মহারাজ দেবদেবীদের পূজা-অর্চনা কি সাধন-ভজনের মধ্যে পড়ে?’
স্বামীজী মহারাজ: ‘পড়ে বৈকী! দেবদেবীদের পূজা করার অর্থ তাঁরা শক্তি ও মহিমায় আমাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, সুতরাং তাঁদের প্রসন্নতা ও আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য তাঁদের পূজা-অর্চনা বলতে তাঁদের কাছে আত্মনিবেদন করা প্রয়োজন। ‘বৈদিক যুগে যাগযজ্ঞের প্রচলন ছিল। যাগযজ্ঞও এক রকমের নয় বৈদিকযজ্ঞ, শ্রৌতযজ্ঞ, পশুযজ্ঞ, পুরুষমেধযজ্ঞ, অশ্বমেধযজ্ঞ নানান্ রকমের। সোমযাগ তাদের মধ্যে প্রধান। সোমযাগে বা যজ্ঞে সোমরস আহুতি দেওয়া হ’ত ঘৃতাহুতির সঙ্গে। সোমযাগে সামগান হ’ত। সামগান বলতে বৈদিক-সামসঙ্গীত। স্তোত্রপাঠও হ’ত, আবার মন্ত্র গানও হ’ত। পাঠ ও গান একরকম নয়! গানে বা সামগানে পাঁচটি, ছ’টি বা সাতটিও বৈদিক-স্বরের সংযোগে সামগান করা হ’ত। সামগানে বৈদিক-দেবতারা সন্তুষ্ট হতেন।
স্বামী প্রজ্ঞানানন্দের ‘মন ও মানুষ’ (৩য় ভাগ) থেকে