বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
একদিন আমরা সকালে আমাদের আশ্রমে আসবার নানারকম কারণ নিয়ে পরস্পর আলোচনা করছি—এমন সময় আচার্যদেব সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। কি নিয়ে আলোচনা চলছে জিজ্ঞাসা করলেন। সব কথা তাঁকে বলতে তিনি উত্তর দিলেন, ‘‘তোমরা যদি নদীতে পড়ে যাও, বা নিজেরা লাফিয়ে পড় কিংবা কেউ ছুড়ে ফেলে দেয়, ফল কিন্তু একই—জলে ভিজে যাবে। আসবার কারণ যাই হোক না কেন—পালাবার কোন উপায়ই এখন আর তোমাদের নেই। গোখরো সর্পে তোমাদের দংশন করেছে— মৃত্যু সুনিশ্চিত।’’ ক্লাসে তাঁর বক্তব্যের কিছু কিছু লিখে রাখতে বলেছিলেন। তদনুযায়ী প্রস্তুত হওয়ার জন্য একটি ভোঁতা ছুরি দিয়ে লেখার পেনসিলটি কেটে নিয়েছি, পেনসিলের মুখটা হয়ে দাঁড়িয়েছে খাঁজকাটা অসমান। ঠিক এই সময়টিতে আচার্যদেব তাঁবুতে এসে হাজির হলেন। পেনসিলটা তুলে নিয়ে মন্তব্য করলেন, ‘‘এই বুঝি তোমার কাজের নমুনা!’’ তারপর নিজেই ঐ অমসৃণ জায়গাটি সেই ছুরিটি দিয়ে কেটে ঠিক সমান ও সূচালো মুখ করে দিলেন। আমার হাতে ওটি ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘যে কোন কাজ কর না কেন, মনে করবে জগন্মাতার পূজা করছ।’’
সকালে একদিন নিজের তাঁবুতে বসে পড়ছি, আচার্যদেব এসে কি পড়ছি জিজ্ঞাসা করলেন। বইটি এমার্সনের রচনাবলী জানালাম। শুনে বললেন, ‘‘একেবারে প্রত্যক্ষ আসলটি না নিয়ে তৃতীয় ব্যক্তির কাছ থেকে গ্রহণ করছ কেন? অভীষ্ট প্রাপ্তির জন্য মাকে জোর করে ধর।’’ আর একবার তাঁবুতে আসবার সময় আবৃত্তি করছিলেন কবি লংফেলোর পদ্যাংশ:
যদিও বিদ্যা রয়েছে দাঁড়ায়ে অনন্ত
চঞ্চল কাল চলে যে নিয়ত মাতিয়া
যদিও হৃদয়ে শক্তি সাহস চূড়ান্ত
স্পন্দন তবু ঘোষিছে থাকিয়া থাকিয়া—
শবঢাক বাজে— জীবনের হলো বিলয় তো
জানায় কফিন, চলিছে কবরে লুটিতে—
শুনে নে এ আয়ু সেইরূপই প্রতিনিয়ত
আগায়ে ছুটিছে মৃত্যু-সাগরে ডুবিতে।
‘বিসর্জনের ঢাকের বাজনার মতো’, আচার্যদেব অস্ফুটস্বরে উচ্চারণ করতে লাগলেন, তারপর বললেন, ‘জীবন-সঙ্গীত’।
জীবন্মুক্তি সুখপ্রাপ্তি স্বামী তুরীয়ানন্দের স্মৃতি— ইডা আনসেল থেকে