রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
একটী সামান্য রাষ্ট্রনৈতিক ঘটনার ফলে প্রদেশের সীমারেখা একদিক থেকে আর একদিকে স’রে যেতে পারে, এমন কি নিশ্চিহ্ন হ’য়ে মুছে যেতে পারে কিন্তু ভারতের এক প্রান্তের লোকের সাথে অন্য প্রান্তের লোকের যে শতযুগবাহিত দেহ-মন-আত্মার সম্বন্ধ, তা ত’ আর কর্পূরের মত উবে যাবার জিনিষ নয়। এ সম্বন্ধ জলের তিলক নয় যে, চখের পলকে মুছে যাবে। এ সম্বন্ধের দলিল হৃদয়ের পরতে পরতে গোত্র-প্রতিষ্ঠাতা ঋষিদের জমাটবাঁধা হৃদয়-রক্ত দিয়ে স্থায়ীভাবে লিখিত।
রাজনৈতিক বিবর্ত্তন, রাষ্ট্রবিপ্লব, স্বার্থান্বেষীর চাতুর্য্য, জিগীষুর উদ্ধত অহমিকা নানা সময়ে প্রাদেশিক সীমারেখার নানাবিধ ভাগ্যনির্ণয় করতে পারে, কিন্তু ভারতের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্য্যন্ত প্রচ্ছন্নভাবে পরিব্যাপ্ত যে সংস্কৃতির ঐক্যবোধ, তাকে খণ্ডিত কর্ব্বে কে? সে সাধ্য কার আছে? যদু, ভরত, পুরু প্রভৃতি নানা শাখায় বিভক্ত আর্য্য, ক্ষত্রিয় যখন মগধ থেকে পুরুষপুর পর্য্যন্ত রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেদিন তাঁদের ভিতরে রাজনৈতিক ঐক্য ছিল না। কিন্তু সংস্কৃতির ঐক্য কখনো বিনাশ পায় নি। সাত্বত-বংশীয়-ভোজ নামক রাজারা যখন দাক্ষিণাত্য বিদর্ভ ও দণ্ডক রাজ্য স্থাপন করেন, তখন পুলিন্দ, শরব, অন্ধ্র, কলিঙ্গ প্রভৃতি অনার্য্যগণ তাঁদের প্রতিবেশী। প্রথমে এই প্রতিবেশীরা ছিলেন পর, কিন্তু সংস্কৃতির আদান-প্রদানের ভিতর দিয়ে সমগ্র দাক্ষিণাত্যে চিরস্থায়ী প্রাণের যোগ স্থাপিত হ’য়েছিল। কোনও রাষ্ট্রনৈতিক দুর্ভাগ্য কিম্বা কোনও কৃত্রিম প্রাদেশিক সীমারেখাই সে যোগকে বিচ্ছিন্ন কর্তে সমর্থ হবে না।
সম্রাট কনিষ্ক যখন সিংহাসনে আরোহণ কর্ল্লেন, তখন তাঁর সমদর্শী শাসন-নীতির গুণে কাবুল ও কাশ্মীর থেকে শুরু করে কাশী পর্য্যন্ত সমগ্র ভূখণ্ডে ব্রহ্মদর্শী ব্রাহ্মণ আর মৈত্রী-সিদ্ধ বৌদ্ধ এই দুইয়ের ভিতরে যে ভাবের আদান-প্রদান ঘটেছিল, তাতেই ভারতীয় ঐক্যের মূল দৃঢ়-প্রবিষ্ট হ’ল। সমুদ্রগুপ্ত যখন নেপাল, কামরূপ, সমতট, পাঞ্জাব, রাজপুতানা এবং দাক্ষিণাত্যের দক্ষিণ কোশল ও কাঞ্চীর উপরে তাঁর প্রভাব বিস্তার করেছিলেন, তখন যুদ্ধ হয়েছিল রাজায় রাজায়, কিন্তু প্রজারা একে অন্যের সংস্কৃতির সাথে আদান-প্রদান ক’রে কৃষ্টি-সমৃদ্ধ পুণ্যসয় ভারত-বৃক্ষের মূলকে চতুর্দ্দিকে সুপ্রসারিত করেছিল। সেই সুপ্রসারিত-মূল মহাবৃক্ষের পতন কোনো রাষ্ট্রনৈতিক ঘটনার দ্বারাই সম্ভব করা যাবে না।
স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের ‘অখণ্ডসংহিতা’ (৪র্থ খণ্ড) থেকে