“মানুষ কেন পাপ করে! কেন পাপে মলিন হয়ে যায়! পাপে ঘৃণা হয় না কেন! হরিনামেও পাপ চিন্তা! কী আশ্চর্য! কলির কী ছলনা! কীট-কুহকে দূরে লয়ে যায়। তবু মানুষ হরিনাম করে না। তাই শব হ’য়ে যায়। মরা হ’য়ে থাকে। হায় হায়! তোমরা হরিনাম কর, শুনি।” হায়! মানুষ হরিনাম করে না! সংসারী লোকেরই হরিনামে বেশী অধিকার। তোমরা হরিনাম ক’রে আমাকে তোমাদের সঙ্গে মিশা’য়ে লও। আমি হরিনামের, এ ভিন্ন আর কারো নই। তোরা মানুষ না হ’লে, হরিনাম না করলে, আমি আর ঘর থেকে বের হবো না। ওরে আমি কার কাছে বের হ’বো? আমায় চায় কে, কেউ তো আমার কথা শুন্‌লি না। আমার জন্য কষ্ট স্বীকার ক’রে কেউ তো হরিনাম করতে চায় না। আমি তো সবাইকেই কাছে রাখতে চাই, আর সবাই দূরে চলে যায়। আমি যাকে ডাইনে যেতে বলি, সে অমনি বাঁয়ে চলে যাবে। খে’তে বল্‌লে সে আদেশ পালবে, খুব খাবে। নিষেধ করলে তা শুন্‌বে না, চুপে চুপে আমায় না ব’লে ময়রা দোকানে যে’য়ে সন্দেশ খে’য়ে আসবে। ওরে আমি সব বুঝি; আমার চক্ষে ধূলি দেয়, এমন সাধ্য কা’রো নাই। বিকারী রোগীকে ঔষধ দিলে তো ফল হয় না। কাল, কলি, পাপ প্রপঞ্চবশে জীব দুঃখ পায়। হরিনাম করে না। আমার কথা শোনে না। হিত বললে অহিত বোঝে। বুঝালেও বোঝে না, নিয়তিও কাটে না। কাল-কলির প্রবঞ্চনায় ভু’লে আপনা হারায়ে যাস্‌ নে। নিজেকে নিজে চেয়ে দেখিস্‌ তোরা কী। তোরা কেমন জানিস্‌, যেমন সাহেবদের মেমদের কুকুর। মেমেরা যখন ফিটন্‌ গাড়িতে উঠে, কুকুরগুলো কোলে বসে থাকে। কি সুন্দর দেখায়! যেমনি ছে’ড়ে দেয় অমনি ময়লা ঘাঁটে। তোরাও তেমনি, যখন হরিনাম করিস্‌ কি সুন্দর থাকিস্‌ আর যেমনি হরিনাম ছে’ড়ে দিস্‌, অমনি যা-তা করিস্‌। কোনও রিপুকে প্রশ্রয় দিলে উপায় নাই। যেমন চারিজন লোক আপনার কাছে কিছু ভিক্ষার জন্য আসিয়াছে। আপনি যদি একজনকে কিছু ভিক্ষা দেন, আর তিনজনকে কিছু না দেন, তবে তাহারা যেমন পাইবার জন্য আপনাকে ছাড়িবে না, সেইরূপ একটি রিপুকে প্রশ্রয় দিলে ক্রমে সমস্ত রিপু আসিয়া শক্ত করিয়া ধরিবে। যেমন লোভকে প্রশ্রয় দিলে সঙ্গে সঙ্গে ক্রোধ আসিয়া উপস্থিত হয়। ক্রমে সব রিপু দ্বিগুণ প্রবল হয়। ইহাতে সন্দেহ নাই। সুতরাং আত্ম-হিতাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি কখনও কোনও রিপুর বশীভূত হইবেন না। আমি কি তোদের কেউ নই? আমি কি ভেসেই যাব? আমায় কি হরিনাম দিয়ে কেউ রক্ষা করবে না? হায়! হায়!! কেউ তো আমার কথা শুনে না, হরিনাম করে না। তোমরা আমার কথা রাখ, হরিনাম কর। আমি তা-ই শুন্‌তে শুন্‌তে ধূলিতে পৃথিবীর সমস্ত আকাশে মিশিয়া যাই। আমার শপথ তোমরা সবাই হরিনাম কর। হরিনামের মঙ্গল হউক। তোমাদেরও মঙ্গল হউক। তা’হলেই আমার উদ্দেশ্য ও ভবধামের লীলা শেষ হয়। তোমরা হরিনাম ক’রে আমাকে তোমাদের সঙ্গে মিশায়ে লও। আমি হরিনামের, এ ভিন্ন আর কা’রো নই। আমি যাহা বলি, তাহা মন দিয়ে শুনো। আমি যাহা লিখি, তাহা মন দিয়ে প’ড়ো। চিঠির মত প’ড়ো না, মুখস্থ ক’রে রেখ। আমি যাহা বলি, তাহা নিত্য চিরকাল প্রচার ক’রো। সদাকাল আমার কথা অনুশীলন ক’রো। আমার কথায় কাজ করলে তোমাদের প্রতিষ্ঠা। আমার কাজ বহুকাল ব্যাপী ধরাধামে থাক্‌বে। চিন্তা কী?
‘মহাপ্রভু জগদ্বন্ধু রচনাবলী’ থেকে