পেশা ও ব্যবসায় অর্থাগমের যোগটি অনুকূল। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ... বিশদ
বল; সরল পথে চলিলে পায়ের যা কষ্ট হয়, দুর্গম বিপথে চলিলেও সেই কষ্টই হয়; হে ধনঞ্জয়, প্রস্তরের বোঝাই হউক বা নিজের খাদ্যদ্রব্যের সম্ভারই হউক, তাহা বহন করিতে কষ্টই হয়, পরন্তু যাহা বহন করিলে বিশ্রাম (বা শ্রমের উপশম) হয় তাহাই লওয়া উচিত; নতুবা শস্য কুটিতে বা ভুষি ছাড়াইতে সমান পরিশ্রম হয়, নরমাংসরন্ধন বা যজ্ঞের হবি পাক করা সমানভাবে শ্রমসাধ্য; পরন্তু, ধর্ম্মপত্নীকে প্রতিপালন করিতে কিম্বা উপপত্নী পোষণ করিতে যদি সমান অর্থব্যয় করিতে হয়, তবে অঙ্গে অপযশ বা কলঙ্ক লেপন করিবে কেন? হে বিচক্ষণ অর্জ্জুন, দধি মন্থন করা বা জল আলোড়ন করা একই ব্যাপার (ক্রিয়া), তেমনি ঘানিতে বালুকা বা তিল পেষণ করা একই ক্রিয়া; পৃষ্ঠে আঘাত লাগিয়া যদি মরণ হইতে রক্ষা না পাওয়া যায়, তবে (শত্রুর) সম্মুখে দাঁড়াইলে আর অধিক কি হইবে? কুলস্ত্রীকে যদি অপরের ঘরে আশ্রয় লইয়া সেখানেও দণ্ডাঘাত সহ্য করিতে হয়, তবে নিজের পতিকে ত্যাগ করা কি নিরর্থক হয় না?
তেমনি, যখন আপন প্রিয় কর্ম্মও শ্রম বিনা অনুষ্ঠিত হয় না, তখন কোন্মুখে বলা যায় যে বিহিত কর্ম্মের আচরণ কষ্টসাধ্য বা কঠিন? হে পাণ্ডুসুত, যে অমৃতদ্বারা অমরত্ব প্রাপ্ত হওয়া যায়, তাহার স্বল্প পরিমাণ লাভ করিতে যদি সর্ব্বস্বও বেচিয়া দিতে হয়, তাহাতেই বা কি? অপর পক্ষে, যে বিষে মৃত্যু হয় এবং উপরন্তু আত্মহত্যার পাতক হয়, তাহাই বা অর্থ খরচ করিয়া কিনিয়া পান করিবে কেন? তেমনি, ইন্দ্রিয়গুলিকে কষ্ট দিয়া, আয়ুর দিন (পরিমাণ) ক্ষয় করিয়া, পাপ সঞ্চয় করিলে, দুঃখ ব্যতীত আর কি থাকে? এইজন্যই স্বধর্ম্মের আচরণ করা উচিত—যাহা সকল শ্রম হরণ করে এবং যোগ্য, ও পরম পুরুষার্থরাজ (শ্রেষ্ঠ পুরুষার্থ) অর্থাৎ মোক্ষ প্রাপ্ত করায়; এইজন্য, হে কিরীটি, সঙ্কটে সিদ্ধমন্ত্রের ন্যায়, স্বধর্ম্মের আচরণ কখনও ভুলিয়াও ত্যাগ করিবে না; কিম্বা, সমুদ্রে যেমন নৌকা, মহারোগে যেমন দিব্যৌষধি পরিত্যাজ্য নহে, তেমনি এই জগতে বুদ্ধি কখনও স্বকর্ম্ম ত্যাগ করিবে না।
হে কপিধ্বজ, যে স্বকর্ম্মরূপ মহাপূজা দ্বারা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে, তিনি তাহার তম ও রজোগুণ সম্পূর্ণভাবে নাশ করিয়া; তাহাকে সুধারূপ সত্ত্বগুণের পথে চালিত করেন, এবং তখন সে আপন (আত্মপ্রাপ্তির) উৎকণ্ঠায় ভবস্বর্গসুখকে কালকূট বিষের ন্যায় মনে করিতে থাকে; যে বৈরাগ্যের কথা ‘সংসিদ্ধি’ রূপে বর্ণনা করিয়াছি; অধিক কি বলিব? (সেই মুমুক্ষু পুরুষ) সেই বৈরাগ্যের পদপ্রাপ্ত হয়; এই বৈরাগ্য-ভূমি জয় করিয়া এই পুরুষ সর্ব্বত্র (সর্ব্বাবস্থার) যে আচরণ করে আর ঐ আচরণের দ্বারা যাহা লাভ করে, এখন তাহাই বলিতেছি; বায়ু যেমন জালে আবদ্ধ হয় না, তেমনি এই পুরুষ দশইন্দ্রিয়রূপ এই সংসারের পাশ—যাহা সর্ব্বত্র বিস্তৃত রহিয়াছে—তাহাতে আবদ্ধ হয় না; ফল পাকিলে যেমন বোঁটায় লাগিয়া থাকে না, বোঁটাও তাহাকে ধরিয়া রাখিতে পারে না, তেমনি (সংসারের প্রতি) তাহার স্নেহ (প্রীতি) সর্ব্বত্র শিথিল হয়।
গিরীশচন্দ্র সেন অনুদিত ‘জ্ঞানেশ্বরী’ থেকে