বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
‘‘স্বামীজী উপবেশন করিলেন, তারপর হাসিতে হাসিতে বলিলেন, ‘আর হরি ওঁ নয়, এবার মা, মা।’ সকলে নিস্তব্ধ। কী অপার্থিব দিব্যভাবে যেন সমস্ত স্থানটি ভরপুর হইয়া গিয়াছে! জগজ্জননীকে আর অপ্রত্যক্ষ মনে হইতেছে না! স্বামীজীর আনন্দ প্রশান্ত। তাঁহার আকৃতিই যেন পরিবর্তিত হইয়া গিয়াছে! অনেকক্ষণ পর্যন্ত চেষ্টা করিয়াও কেহ কথা কহিতে পারিতেছেন না। এই মুহূর্তে তাঁহারা যেন বাস্তব জগতের পারে চলিয়া গিয়াছেন। স্বামীজীই আবার বলিলেন, ‘আমার সব স্বদেশপ্রেম ভেসে গেছে। আমার সব গেছে, এখন কেবল মা, মা!’
‘‘ক্ষণকাল নীরবতা, আবার বলিলেন, ‘আমার খুব অন্যায় হয়েছে। মা আমাকে বললেন, ‘‘যদিই বা ম্লেচ্ছরা আমার মন্দিরে প্রবেশ করে, আমার প্রতিমা অপবিত্র করে, তোর তাতে কী! তুই আমাকে রক্ষা করিস, না, আমি তোকে রক্ষা করি!’’ সুতরাং আমার আর স্বদেশপ্রেম বলে কিছুই নেই। আমি তো ক্ষুদ্র শিশু মাত্র!’ বিদায় লইবার পূর্বে তিনি সস্নেহে বলিলেন, ‘এখন আমি এর চেয়ে বেশি বলতে পারব না; বলতে নিষেধ আছে।’
‘‘জগজ্জননীর সত্তায় অনুপ্রাণিত স্বামীজীর এই আত্মবিস্মৃতি, এই পরিবর্তন তাঁহার শিষ্যগণকে মুগ্ধ ও অভিভূত করিয়াছিল। এই অপার্থিব ভাবরাজ্যের প্রকাশ বিশেষ করিয়া নিবেদিতার হৃদয়ে এক দিব্য অনুভূতির সঞ্চার করে। নীরব উপাসনায় তাঁহার সমগ্র অন্তর ব্যাকুল হইয়া উঠিল।
নিবেদিতার ভাষায়, ‘‘সেদিন সকালে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথাবার্তায় কাটিয়া গেল।... কথা শুনিতে শুনিতে আমরা যেন এক অন্তরতম পবিত্র রাজ্যে প্রবেশ করিলাম। মধ্যে মধ্যে তিনি কোন ভক্তিমূলক সঙ্গীতের একাংশ গাহিয়া তাহার অনুবাদ করিতেছিলেন—গানগুলি সবই জগন্মাতার উদ্দেশ্যে।
‘‘শ্যামা মা উড়াচ্ছ ঘুড়ি (ভব-সংসার বাজার মাঝে).../
ঘুড়ি লক্ষের দুটো-একটা কাটে, হেসে দাও মা হাত চাপড়ি,’’
এই গানটি তিনি বহুক্ষণ ধরিয়া বারবার গাহিলেন। গানের সঙ্গে সঙ্গে সেই ভক্তজন—চিত্তহারিণী শ্যামা মায়ের মূর্তি আমাদের মনে উজ্জ্বল হইয়া উঠিতে লাগিল।’’
‘‘আর গতকাল প্রভাতে শেষ কয় ঘণ্টা যখন তিনি জগন্মাতার উদ্দেশে গান করিতেছিলেন, আমরা [নিবেদিতারা] নিঃশ্বাস রুদ্ধ করিয়া রাখিয়াছিলাম।’’ ‘‘...একথা বুঝিতে পারিয়াছিলাম, সেদিন তাঁহার সঙ্গে আমরা যে কয়েক ঘণ্টা কাটাইয়াছি, তাহার উজ্জ্বল আলোকচ্ছটায় আমাদের সমগ্র ভবিষ্যৎ অতিবাহিত হইবে।’’