বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
প্রার্থনার যে কোন সুফল আছে এতে প্রায়ই সন্দেহ প্রকাশ করা হয়, বলা হয় যে তা অনাবশ্যক এবং নিষ্ফল। এ কথা সত্য যে বিশ্বনিয়ম তার আপন লক্ষ্যের পথে চলবে, কারো ব্যক্তিগত উপরোধে টলবে না, আর এ কথাও সত্য যে যিনি পরাৎপর তিনি তাঁর সর্বজ্ঞ শক্তিতে দেখতে পান যে কখন কি করা দরকার, তিনি মানুষের চিন্তা ও ব্যক্তিগত কামনার দ্বারা জগৎ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কোনরূপে প্রভাবিত হতে পারেন না। কিন্তু তথাপি সেটা যান্ত্রিক নিয়ম নয়, সেটা জীবন্ত শক্তির ক্রিয়া এবং সেখানে মানুষের আস্পৃহা ও শ্রদ্ধাবিশ্বাসের স্থান নিতান্ত অনর্থক নয়। প্রার্থনা মানুষের সেই আস্পৃহা ও শ্রদ্ধাবিশ্বাসকেই একটা আকার দেয়। যদিও তা অনেক সময় নিতান্ত স্থূল ও ছেলেমানুষি হয়ে দাঁড়ায়, তথাপি তার মধ্যে একটা তাৎপর্য থাকে এবং কিছু প্রকৃত শক্তিও থাকে। অর্থাৎ তা মানুষের ইচ্ছা ও আস্পৃহা ও শ্রদ্ধাকে ভগবানের চেতন ইচ্ছার সংস্পর্শে এনে একটা সচেতন ও জীবন্ত সম্বন্ধ স্থাপন করে। প্রথমে যদিও সেই সম্বন্ধ অহংবুদ্ধি প্রণোদিত হওয়াতে নিতান্ত নিম্নস্তরের হয়, কিন্তু তার পরে আমরা তার উচ্চতর আধ্যাত্মিক সত্যে গিয়ে পৌঁছাতে পারি। তখন আর কি চাইছি তা নিয়ে কথা নয়, মানুষের জীবনের সঙ্গে ভগবানের চেতন সংস্পর্শ ও লেনদেন নিয়ে কথা। আধ্যাত্মিকের দিক থেকে এই চেতন সংস্পর্শের শক্তিমূল্য অনেক বেশি। জীবনে আমরা একান্ত আত্মনির্ভর হয়ে যে সংগ্রাম করি, প্রার্থনা তার মধ্যে একটা পূর্ণতর আধ্যাত্মিক অনুভূতি এনে আমাদের শক্তিসমৃদ্ধ করে। শেষ পর্যন্ত সেই প্রার্থনা তার চেয়ে বৃহত্তম সম্বন্ধে গিয়ে বিলীন হয়, অর্থাৎ তার ভিতরকার আস্পৃহা ও শ্রদ্ধাবিশ্বাসই আনন্দের বস্তু হয়ে বড় হয়ে ওঠে। তার অর্থ তখন আরো উচ্চ স্তরে গিয়ে উদ্দেশ্যবিহীন ভক্তিতে উপনীত হয়, কোন দাবিদাওয়া ঘুচে গিয়ে তখন তা সহজ ও বিশুদ্ধ ভগবৎ প্রেমে পরিণতি লাভ করে। মানুষের আত্মা ভগবানের কাছে চায় সাহায্য, চায় আশ্রয় এবং নির্দেশ, চায় সাফল্য—অথবা চায় জ্ঞান, চায় শিক্ষণ, চায় আলো,—কারণ তিনি জ্ঞানসূর্য,—অথবা সে চায় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি, ব্যক্তিগত ব্যথাবেদনা, অথবা জগৎযন্ত্রণা থেকে মুক্তি, অথবা তার ভিতরকার হেতু থেকে মুক্তি।...
মানব আত্মা তার সকল কামনা ও দুঃখের কথা জানায় ভগবতী মাতৃআত্মার কাছে, আর জগন্মাতাও তাই চান, যাতে তিনি তাঁর হৃদয়ের স্নেহ সেখানে ঢেলে দিতে পারেন। মায়ের ওই স্নেহ আপনা হতে আছে বলেই মানব আত্মা তাঁর দিকে ফেরে, কারণ সেখানেই আমাদের আপন গৃহ, জগতের পথে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে সেই মাতৃহৃদয়ে গিয়েই আমরা বিশ্রাম পেতে পারি।