উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে মধ্যম ফল আশা করা যায়। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে নতুনত্ব আছে। কর্মরতদের ... বিশদ
মহাভাবই ধরা দেন আমাদের নিকট নানা ভাবের মাধ্যমে, নানা মন্ত্রের মধ্য দিয়ে। এক এক মন্ত্র এক একটি ভাবের প্রতিনিধিত্ব করে। মহাভাব অক্ষয় অব্যয়। তাই মন্ত্রও স্বরূপত অক্ষয় ও অবিনাশী। ভাব অবিনাশীরূপে আকাশে বাতাসে ঘুরে বেড়ায়; ঋষি মন্ত্ররূপে তাঁকে প্রত্যক্ষ করেন ভাবঘোরে নিজ হৃদয়ের অন্তঃস্থলে। এই ভাবই মন্ত্র-দর্শনের কারণ। আবার মন্ত্রের সেবার মধ্য দিয়েই ক্রমশ আমাদের ভিতরে ভাব ও মহাভাব বিকশিত ও প্রস্ফূটিত হন। এটা সহজেই প্রত্যক্ষ করা যায়। যিনি যত বেশী নিষ্ঠাভরে মন্ত্রের সেবা করেন, দিব্যজ্ঞানের আলো তাঁর মধ্যে তত বেশী এবং তত দ্রুত উন্মোচিত হয়—তাঁর লৌকিক জ্ঞান ও শিক্ষা বিশেষ থাকুক বা না-থাকুক। তিনি যা ভাবেন ও বলেন—লোকে তা শুনে থ’ মেরে যায়—কারণ তিনি মহাভাবের অলঙ্ঘ্য প্রভাবেই কথা বলছেন, কাজ করছেন। দৃষ্টান্ত যীশুখৃষ্ট, শ্রীচৈতন্য, শ্রীরামকৃষ্ণ প্রভৃতি। নামসাধনের মধ্য দিয়ে যে দিব্যজ্ঞান ফুটে ওঠে তা অমোঘ ও বিশ্বপ্লাবী। সেই জ্ঞানের সামনে সাধারণ শিক্ষালব্ধ জ্ঞান খড়কুটোর মতন ভেসে যায়— সূর্য্যের নিকট মোমবাতির আলো যেমনটি দেখায়। জলসেচ করে কতটুকু আর ফসল ফলান যায়? বর্ষার বারিধারায় ফসলের হাসি সহজে সর্ব্বত্র ফুটে ওঠে। লৌকিক জ্ঞান খণ্ড খণ্ড ভাবকে অতি ক্ষীণভাবে ধরতে প্রয়াসী। তাই সেই জ্ঞানের প্রভাব, গতি ও অধিকার নিতান্তই সীমিত, স্তব্ধ ও আড়ষ্ট। দিব্যজ্ঞান মহাভাবের প্রেরণায় পুষ্ট। বাইবেল বলছেন, He speaks with authority—তাঁর বাক্যের মধ্যে বীর্য্য রয়েছে—এই বীর্য্যই কর্ত্তত্ব বা অধিকার প্রদান করে। শ্রীরামকৃষ্ণদেবও একথা প্রায়ই বলতেন। এটা কোন বানানো ব্যাপার বা অতিরঞ্জন নয়। এটি ভাবের আধিকারিক পুরুষদের নিতান্তই অভিজ্ঞতার ফসল। ইহুদি পুরোহিতেরা শোনা-কথা ধার-করা কথা বলতেন, যীশুখৃষ্ট সাধনলব্ধ কথা বলতেন। মন্ত্রের সেবার প্রত্যক্ষ ফল হ’ল নব নব ভাবের উন্মেষ—যে ভাব আবার জমাট বেঁধে মহাভাব বা প্রেমে পরিণত হয়। মহাভাব থেকে যেমন মন্ত্রের অবতরণ, তেমনি মন্ত্রের সূত্র ধরেই আমাদের পুনরায় মহাভাবে উত্তরণ—বৃত্তটি এভাবে পূর্ণ হয়।
অযাচকের ‘জপ’ থেকে