বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
কৃপা করা না করা তাঁর ইচ্ছা। সেক্ষেত্রে ঠাকুরের কাছে এই বলে order বা হুকুম করা চলবে না—আমি এত করেছি তাই এত দিতে হবে। প্রার্থনা আর order এক নয়। কৃপার রাজ্যের কথা আলাদা। ঠাকুর যে কখন কাকে কীভাবে কৃপা করবেন, তা কেউ বলতে পারে না।
ভালবাসতে গেলে আঘাত পেতেই হবে। ভগবানের ভালবাসা নিঃস্বার্থ ভালবাসা। ভগবান যখন মানুষরূপে আসেন, তাঁকে আঘাত পেতে হয়। অবতার আসেন ভালবাসার চরম আদর্শ দেখাতে।
অন্তরে ক্ষোভ বা বাসনা পুষে রাখলে কখনও সার্থক মানুষ হওয়া যায় না। মনকে সব সময় শান্ত রাখতে হবে। লক্ষ্য রাখবে যাতে কোনও বাসনা ঢুকে মনকে অশান্ত করতে না পারে। সন্ন্যাসী যে হবে তাকে করতে হবে সব কিছুর সম্যক্ ন্যাস। যার অন্তরের বাসনার সম্যক্ ন্যাস হয়েছে সে-ই সার্থক সন্ন্যাসী। সন্ন্যাসীর কোনও ক্ষোভ থাকবে না। তীব্র বৈরাগ্য না নিয়ে এলে আশ্রমে কেউ ঠিক ঠিক ভাবে থাকতে পারে না। আশ্রমে থাকতে গেলে চাই তীব্র বৈরাগ্য। একমাত্র আধ্যাত্মিক পথই মানুষকে শান্তি দিতে পারে। যার যেমন সামর্থ্য তার তেমনই চলা উচিত। অন্যের অনুকরণ ক’রে নিজের সামর্থ্যের বাইরে কখনোই চলা উচিত নয়। এতে গৃহে অশান্তির সৃষ্টি হয়, মনে বাসনা জেগে ওঠে, তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যে যার নিজের পথে ঠিকমত চললেই সংসারে শান্তি আসবে। মনে কোনও বাসনার সৃষ্টি হলেই তাকে দূর করার চেষ্টা করতে হবে। এজন্য তীব্র প্রার্থনা করতে হয়।
সত্যপথে চলাটা জীবনের উদ্দেশ্য ঠিকই। সত্যপথকে ভিত্তি করেই জীবনে চলতে হবে। কিন্তু শুধু সেটাই সব নয়। এর সাথে ভগবৎ-বিশ্বাস, ভক্তি, ভগবৎ-শরণ, ঠাকুরের প্রতি ভালবাসা এবং নিষ্ঠাকেও যুক্ত করতে হবে। এইভাবেই জীবনের চলা সহজ হয়ে যাবে। সব সময় প্রধান উদ্দেশ্যকেই মনে রাখা উচিত। আমার জীবনের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য হবে ঈশ্বরকে লাভ করা। ঈশ্বরকে লাভ করলেই জীবনের সব চলা সার্থক হবে।
মনের দুটি ভাগ আছে। একটি চোর মন অর্থাৎ যে মন নিম্নগামী। অপরটি পুলিশ মন, যে চোর-মনকে সব সময় সতর্ক ক’রে দিচ্ছে। এরই নাম বিবেক। মনকে একাগ্র করতে গেলে এই বিবেককে সর্বদা কাজে লাগাতে হবে। ঠাকুরের পথে আসতে গেলে নানারকম বাধা আসবে। শরীর যাবে, মন যাবে, নানাভাবে মারের আক্রমণ হবে। যে এইসব বাধা অতিক্রম ক’রে ঠাকুরকে ভালবাসতে পারবে ও ঠাকুরের দেওয়া পথকে গ্রহণ করতে পারবে, সে-ই সার্থক জীবন লাভ করবে।
শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলেছেন, ‘ঈশ্বর আছেন, তাঁর জগৎ দেখলে বোঝা যায়।’ এ কথাটা যে কত গভীর এবং এর ভেতর যে কত দ্যোতনা রয়েছে সেটা একটু তলিয়ে দেখলেই বোঝা যায়। মানুষের ক্ষেত্রেও দেখা যায় ইতিহাসের পাতায় সে বিশেষভাবে চিহ্নিত হয় তার activities-এর মাধ্যমে। সাধারণ একটি লোক গতানুগতিক জীবনযাপন করছে, তার অস্তিত্ব তার মৃত্যুর সঙ্গেই মুছে যাবে। শত বৎসর বাঁচলেও ইতিহাস তাকে চিহ্নিত করবে না। বাল্মীকি, কালিদাস তাঁদের প্রতিভার মাধ্যমেই ঐতিহাসিক পুরুষ হলেন। তাঁদের প্রতিভা না থাকলে কেউ কি চিনতো!
অবতারপুরুষও তাঁর জীবনকে কোন সীমিত গণ্ডীর ভেতর বন্দী ক’রে রাখেন না। তিনি সৃষ্টি ক’রে নেন একটি বিরাট গোষ্ঠীর, এবং যুগ অনুযায়ী তাঁকে নানা ধরনের প্রকাশের মাধ্যম খুঁজে নিতে হয়। তাঁর সেই বিচিত্র activities-ই তাকে সর্বজনীন বলে প্রকাশ করে।