রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
‘পরমাত্মা নারায়ণ’ এই নাম প্রসিদ্ধ চোর ব’লে পৃথিবীতে কথিত আছে। মানবগণের বহু জন্মার্জ্জিত পুঞ্জীভূত পাপরাশি শ্রবণ মাত্রেই হরণ করেন।
‘নারায়ণ’ নাম যেমন কর্ণে যাবে অমনি সঙ্গে সঙ্গে অনেক জন্মকৃত সমুদয় পাপ নষ্ট হ’য়ে যাবে?
অবশ্যই যাবে।
সে নারায়ণ কে? আর তাঁর নারায়ণ নামের অর্থ কি? “নারায়ণ” একথা বল্লেই ঠাকুরঘরের কুলুঙ্গীতে সিংহাসনে স্থিত শালগ্রামকেই মনে পড়ে। তাঁর এত শক্তি!
শালগ্রাম হলেন নারায়ণের প্রতিমা, পূজার আধার।
প্রতিমা কত প্রকার?
প্রতিমা আট প্রকার—শৈলী দারুময়ীলৌহী লেপ্যা লেখ্যা চ সৈকতী।/ মনোময়ী মনিময়ী প্রতিমাষ্টবিধং স্মৃতা।।
শিলাময়ী, দারুময়ী, লৌহ ও সুবর্ণাদিময়ী, লেপ্যামৃচ্চন্দনাদিময়ী, লিখিতা অঙ্কিতা ছবি, বালুকাময়ী, হৃদয়ে পূজায় মনোময়ী, মণিময়ী, প্রতিমা—এই আট প্রকার।
তাহ’লে উনি নারায়ণ নন? নারায়ণের প্রতিমা।
বাবার ছবি বাবা নন, এ কথা সত্য। কিন্তু নারায়ণের প্রতিমা আর নারায়ণ স্বতন্ত্র নন। কেননা, তিনি ভিন্ন জগতে আর কিছু নাই। কাজেই নারায়ণের প্রতিমাও নারায়ণ। শ্রীভগবান্ শঙ্করাচার্য্য বলেছেন—“শালগ্রামে বিষ্ণুবুদ্ধি বিজ্ঞানগ্রাহিকা ভবতি।” সিংহাসনের নারায়ণ ধ্যান কর তো?—ধ্যেয়ঃ সদা সবিতৃমণ্ডলমধ্যবর্ত্তী/ নারায়ণঃ সরসিজাসনসন্নিবিষ্টঃ।/ কেয়ূরবান্ কনককুণ্ডলবান্ কিরীটী—/ হারী হিরণ্ময়বপুর্ধৃতশঙ্খচক্রঃ।।
সতত সূর্য্যমণ্ডল-মধ্যে অবস্থিত, পদ্মাসনে উপবিষ্ট, অঙ্গদ বাহু ভূষণে ভূষিত সুবর্ণকুণ্ডলধারী মস্তকে কিরীট, গলায় হার, সুবর্ণময় দেহ এবং চতুর্ভূজে শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম-শোভা পাইতেছে।
হাঁ।
তাহ’লে নারায়ণ বল্লে সিংহাসনের শালগ্রামকে মনে পড়্বে কেন?
আচ্ছা, নারায়ণ যে সূর্য্যমণ্ডলে অবস্থান করেন—একথা কি শ্রুতিতে আছে?
হাঁ—হাঁ, “অথ ষ এষ অন্তরাদিত্যে হিরন্ময়ঃ পুরুষো দৃশ্যতে” আর আদিত্যমণ্ডলের অভ্যন্তরে এই যে হিরন্ময় পুরুষ দৃষ্ট হন, তিনি জ্যোতর্ম্ময় শ্মশ্রুযুক্ত, সুবর্ণময় কেশযুক্ত, তাঁর পদের নখাগ্র পর্য্যন্ত জ্যোতির্ম্ময়, সূর্য্যবিকসিত পদ্মের ন্যায় তাঁর চক্ষুর্দ্বয়, তাঁর নাম উৎ যেহেতু তিনি সমস্ত পাপ হ’তে ঊর্দ্ধে অবস্থিত, যে ব্যক্তি এঁকে এরূপ বিদিত হন তিনি নিখিল পাপ হ’তে উত্তীর্ণ হ’য়ে থাকেন।
তাহ’লে সেই সূর্য্যমণ্ডলমধ্যস্থিত পুরুষই নারায়ণ? তাঁকেই আমরা শালগ্রামে পূজা করি?
তিনি যে মাত্র শালগ্রামে ও সূর্য্যমণ্ডলে আছেন—তা নয়। তিনি সকলকার চক্ষুতে অবস্থান করেন।
‘শ্রীওঙ্কারনাথ-রচনাবলী’ (৩য় খণ্ড) থেকে