বিমাসূত্রে ধনাগম হতে পারে। প্রেম-প্রণয়ে আনন্দ। কাজকর্মে অগ্রগতি ও সুনাম। ... বিশদ
মা: ক্ষণ মানে সময়, কিন্তু তোমাদের এ সময় নয়। সময় মানে স্ব-ময়, সেখানে স্ব ছাড়া আর কথাই নাই।
প্রশ্ন: গতির মধ্যে স্থিতি, স্থিতির মধ্যে গতি, এটা কী?
মা: বীজ মাটীর সঙ্গে যেই যুক্ত হল, অর্থাৎ মিলল, যেই মুহূর্তে সে স্থিতি। এই স্থিতি হ’ল আর অঙ্কুরিত হওয়ার দিকে চলল। চলাটা ত গতি? গতি মানে এক জায়গায় নাই। আবার জায়গায়ই ত ছিল। আর ছিল মানে আছে। গাছটা যত বড় হ’য়ে যাচ্ছে, প্রত্যেকটা জায়গায়ই আছে—সাময়িকও আছে। আবার পাতাটা বড় হ’য়ে যাচ্ছে, ঝ’রে যাচ্ছে, এক জায়গায় নাই। আছে আর নাই, একটা গাছেই ত। গাছে ফল আছে, তাই দেবে। দেবে মানে দেয়, উপমা ত সর্বাঙ্গীণ হয় না।
আবার ক্ষণের প্রসঙ্গে মা বলিলেন—
মা: সব সময়ই ত ক্ষণ। যেমন একটি গাছে অনন্ত গাছ, অনন্ত পাতা, অনন্ত গতি, অনন্ত স্থিতি, তেমন একটি ক্ষণের মধ্যে অনন্ত ক্ষণ, অনন্ত ক্ষণের মধ্যে একটা ক্ষণ। দেখ এখন গতি স্থিতি ঐ ক্ষণেই। তা হ’লে ক্ষণের প্রকাশ কথাটি আসে কেন? আসে এই কারণে, যেমন তোমার যে আলাদা আলাদা ভাব, ভিন্ন বোধে ত? তাই ভিন্ন আছে তোমার কাছে। এই যে তোমার কাছে ভিন্নত্ব রয়েছে, অর্থাৎ তুমি যে সৃষ্ট হয়েছ, সেই সময়ে অর্থাৎ যে ক্ষণে সেই অনুযায়ী তোমার প্রকৃতি, তোমার চাওয়া, পাওয়া, পুষ্টি, জিজ্ঞাসা—সব। সেইজন্য তোমার জন্মের ক্ষণ আলাদা, তোমার মায়ের ক্ষণ আলাদা, তোমার পিতার ক্ষণ আলাদা, আলাদা প্রকৃত স্বভাব। তোমাদের যার যার লাইন অনুযায়ী এমন সময় এমন ক্ষণ পেতে হ’বে, যে যোগে তুমি যুক্ত রয়েছ তার প্রকাশ হওয়া অর্থাৎ মহাযোগ প্রকাশ হওয়ার জন্য। মহাযোগ মানে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড তোমাতে, তুমি তাহাতে, আর বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড ব’লে কোন প্রশ্ন নাই। আছে নাই, নাই-ও না, আছেও না, তারো আগে, যা’ বল তাই! সেই যে রূপেই হউক প্রকাশ হওয়া। সেই ক্ষণটা, যে সময়টা পেলে তুমি নিজেকে জানতে পারবে।
তোমার নিজেকে জানা মানে তোমার পিতামাতা যে ক্ষণে প্রকাশ সেটাও পেয়ে যাবে। শুধু পিতামাতা নয়—বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড সমগ্র। যে ক্ষণের সূত্র ধ’রে এই হয়। নিজেকে জানা ত তোমার শরীরটাই জানা নয়,—যেখানে পরম পিতা পরম মাতা, পরম বন্ধু, পরম পতি, আত্মা যা নিত্য আছে, পরিপূর্ণ প্রকাশ হওয়া। যেমন যেক্ষণে জন্ম হয়েছে, তুমি জান না, আর যে ক্ষণটি পেলে ‘আচ্ছা আমি এই’।
যে মুহূর্তে, যে ক্ষণটায় তুমি, ‘আচ্ছা আমি’ এই ব’লে নিজেকে পেলে সেই মুহূর্তে তুমি বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড পেয়ে গেলে। যেমন একটি বীজ পেয়ে গেলে অনন্তটি গাছ পাওয়া গেল। কাজেই সেই ক্ষণটি পাওয়া যে ক্ষণটি পেলে পাওয়ার বাকীর প্রশ্ন থাকে না।
অভাব আর স্বভাব এক জায়গায়ই—একমাত্র ঐ-ই। অভাবটা স্বভাবটা কী? তিনিই। কেননা একটা বীজই ত সেই গাছ, সেই বীজ, সেই রকমারীটি ঐ-ই ত। অভাব দিয়ে অভাব পূরণ করছ, তাই অভাব যাচ্ছে না এবং অভাববোধও যাচ্ছে না। সেই অভাববোধের যখন জাগরণ হয়, তখনই খাঁটি জিজ্ঞাসা। সেই অভাববোধটা আপনা বোধের অভাব হয় তাই খাঁটি জিজ্ঞাসা আসে, এটি জেনে রেখ। দুই বল, এক বল, অনন্ত বল, যে বল সব ঠিক।
মা: এ জীবের কথা বল্লে ব’লে এই কথা বলা হচ্ছে কিন্তু। যদি ঐদিকের অমুক্ত দেখা থাকে তাহ’লে তিনি মুক্ত কোথায়? দেখাদেখি কোথায় সেখানে? কোন জায়গায় ত দেখাদেখি আছে। মুক্ত-অমুক্তের প্রশ্ন কোথায়?