বিতর্ক-বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম-পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থোপার্জনের সুযোগ।প্রতিকার: অন্ধ ব্যক্তিকে সাদা ... বিশদ
না—না—উন্মত্ততা কেন হবে? পতিতপাবন, অধমতারণ তাঁর নাম। কাজে কাজেই পতিতের তো তাঁর উপর খুব দাবী রয়েছে। তাঁর অহৈতুকী কৃপা পঙ্গুকে গিরিলঙ্ঘন ও মুক্কে বাচাল ক’রে একলা তো চিরপ্রসিদ্ধ।
মূলেই ভূয়োকড়ি—ভক্তি নেই যে! নাম করি লোক দেখিয়ে নাম কেনবার জন্য, লোকে সাধু বল্বে, সম্মান কর্বে—এ কামনা তো ভেতরে ভেতরে খেলা করে। হোক্ না, তাতেই ক্ষতি কি!
দম্ভেন বাতিভক্ত্যা বা নিষ্কামাদ্ বা সকামতঃ।
যদ্যত্র রাঘবো গীতস্তেন পাপং হুতং ভবেৎ।।
যথা বহ্নিস্তুলারাশিং স্পর্শিতং কামনাং বিনা।
কামেন বা দহত্যেব ক্ষণাত্তদ্বন্ন সংশয়ঃ।।
—আনন্দ রামায়ণ। দম্ভ কিম্বা অতিভক্তি সহকারে, নিষ্কাম অথবা সকাম যে কোনভাবে রামনাম গীত হ’লে নিখিল পাপ ভস্মীভূত হ’য়ে যায়। অগ্নিতে তুলারাশি নিষ্কাম অথবা সকাম যে কোনভাবে নিক্ষেপ কর্লে যেমন তৎক্ষণাৎ দগ্ধ হ’য়ে যায়, পাপও সেইরূপ জান্বে।
পাপ যে নষ্ট হয় সেই পাপী অথবা অপর লোকে বুঝ্তে পারে?
হাঁ হাঁ সকলেই বুঝ্তে পারে।
কোন্ প্রমাণে বুঝা যায়?
পাপ নষ্ট হ’লেই তা’র প্রকৃতি সত্ত্বগুণময়ী হ’য়ে যায়। জপ, পূজা, পাঠ, সদ্গ্রন্থ নিয়ে সে থাক্বে; চোখ-মুখ তার নিষ্পাপের পরিচয় দেবে। একটি লোক জাতিতে উগ্রক্ষত্রিয়। বর্ধমান জেলায় বাড়ী। হুগলী জেলায় মাতুলের সম্পত্তি পায়। একে যৌবন তাতে ধন-সম্পত্তি, মদ ও বেশ্যা তাকে অধিকার কর্লে। বেচারা মদ ও বেশ্যার নেশায় বিভোর হ’য়ে জাতি-জ্ঞাতি, ধর্ম-কর্ম, মান-সম্ভ্রম সব ভাসিয়ে দিয়ে, তাতেই মশগুল হ’য়ে দিনের পর দিন কাটাতে লাগলো। শুধু স্ফূর্তি আর স্ফূর্তি।
হঠাৎ কি জানি কি প্রকারে তার চাকাখানা ঘুরে গেল। তার বাবু বেশ, মদ, বেশ্যা সূর্য্যোদয়ে অন্ধকারে ন্যায় কোথায় অন্তর্হিত হল তার আর কেউ সন্ধান কর্তে পারল না। দ্বাদশাঙ্গে তিলক, গলায় তুলসীমালা, হাতে হরিনামের ঝুলি—সেই বদ্ধ মাতাল বেশ্যাসক্ত জপ আরম্ভ কর্লে। দিন নেই, রাত নেই— হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
অষ্টপ্রহর, চব্বিশ প্রহর, বাড়ীতে নাম চল্তে লাগলো। লোকজন খাওয়ান, সাধুসেবা এই নিয়ে পাপমুক্ত পুরুষ, জীবনের শেষ কটাদিন কাটিয়ে দিয়ে নাম কর্তে কর্তে নিত্যলোকে গমন কর্লেন। গল্প কথা নয়, তাকে জানেন এমন লোক এখনও জীবিত আছেন।
নামের শক্তির কথা সাধুদের মুখে শুনি, ভক্তমাল প্রভৃতিতে পড়েছি। নাম অসাধ্য সাধন কর্তে পারেন, নাম মরাকে বাঁচাতে পারেন, নাম পাথরের বৃষকে ঘাস খাওয়ান, নামের দ্বারা কুষ্ঠরোগ আরোগ্য হয়; বিষে, শূলে, হস্তীপদতলে নাম রক্ষা করেন ইত্যাদি নামের স্তুতি ভক্তিশাস্ত্রে দেখতে পাই। কিন্তু আমি তো রাম রাম করি—কৈ ওরকম অলৌকিক ব্যাপার তো কিছু আমার নামে হয় না!
একটা গল্প বলি শোন। একজন দরিদ্র ব্রাহ্মণ ছিলেন। সংসারে দারুণ কষ্ট। প্রাণপণে অর্থের চেষ্টা ক’রে অকৃতকার্য্য হ’য়ে মরণের জন্য যখন প্রস্তুত হয়েছেন এমন সময় একজন সিদ্ধপুরুষের দর্শন পেয়ে তাঁকে নিজের দুঃখের কথা জানালে সিদ্ধপুরুষ বললেন, “আমি তোমার দুঃখ দূর করে দিব, তুমি কাল সকালে এস।” ব্রাহ্মণ সকালে তাঁর নিকট উপস্থিত হ’লে তিনি তাঁর চাদরে একটি মোড়ক স্বহস্তে বেঁধে দিয়ে বললেন, “তুমি এই চাদর কাঁধে ফেল্লেই ইচ্ছামত অন্তরীক্ষে গমন কর্তে পার্বে, জলে-স্থলে তোমার অবাধ গতি হবে, তার দ্বারাই তোমার অর্থাভাব দূর হ’য়ে যাবে, কিন্তু কোনদিন এই মোড়কটি খুলো না।” ব্রাহ্মণ অপ্রত্যাশিতভাবে এই সিদ্ধিলাভ ক’রে সেই মহাপুরুষকে প্রণাম করত গৃহে ফিরে এলেন।