সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক, কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার বা ... বিশদ
মানুষ সবসময় নিরাপত্তা (security) খোঁজে এবং নিজের জীবনে সে এক ধরনের কাল্পনিক নিরাপত্তা গড়েও তোলে। ‘কাল্পনিক’ শব্দটি ব্যবহার করলাম, কারণ স্থায়ী নিরাপদ (permanently secured) বলে এ-জগতে কিছু নেই। চাকুরি যাবার ভয়, রাজভয় ইত্যাদিও এ-রকম। অপমান বা মানহানিকে মানুষ ভয় করে, কারণ সমাজে বা পরিবারে সে এতদিন যে সত্তা (image) বা স্থান (status) নিয়ে নিরাপত্তা গড়ে তুলেছিল, অপমানের ফলে সেই দুটি বিলীন হয়ে তাকে নতুন সত্তা ও স্থানে সরিয়ে দিতে পারে।
ভূতের ভয় মানুষ কেন পায়? কারণ, ভূতের মুখোমুখি হলে সে কোন্ পরিস্থিতিতে পড়বে, তা জানে না; এই নতুন পরিস্থিতিতে কিভাবে সে আত্মরক্ষা করবে, তাও তার জানা নেই। দেখা যাচ্ছে, সব রকম ভয়ের কারণই হলো নিরাপদ অবস্থা থেকে অনিশ্চিত অবস্থায় যাওয়ার আশংকা।
ভয় ব্যাপারটি যদিও বর্তমান কালে হয়, তবুও এর বিষয় ভবিষ্যৎ কালের। বর্তমানকে আমি জানি, ভবিষ্যতকে জানি না। কি বিপদ ঘটবে তা যদি আমার জানা থাকে, তবে তার জন্যে আমি প্রস্তুত হতে পারি। কিন্তু আমি জানি না, মৃত্যু হলে কি হবে, ভূত দেখলে কি হবে, চাকুরি গেলে কি হবে, পুলিশ ধরলে কি করবে। এই যে ‘না জানা’ এটিই আমার মনে ভয় সৃষ্টি করে।
যে-কোনো ভয়ের কারণ অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। মানুষ সব সময় নিরাপত্তা খুঁজছে, দৈহিক ও মানসিক দিক থেকে। তার চিন্তা এই নিরাপত্তা খোঁজায় অভ্যস্ত। এই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার উপক্রম হলেই সে ভয় পায়। আমি যদি মনে মনে বিচার করি—কেন আমি নিরাপত্তার জন্যে বিশেষ বিশেষ মানুষে ও বিষয়ে আসক্ত—তবে দেখবো যে আমি কতকগুলি কাল্পনিক ব্যাপারকে বাস্তব বলে ধরছি। এবং এটিই আমার জীবনে বড় বড় সমস্যা নিয়ে এসেছে।
তাত্ত্বিক দিক ভয়ের কারণ বুঝলেও যেটি প্রয়োজন তা হলো, আমি যখন ভয় পাচ্ছি তখন নিজে নিজে চিন্তা করা—কেন ভয় পাচ্ছি। এভাবে নিজের ভয়ের কারণ নিজেকেই আবিষ্কার করতে হয়, সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় নিজেকে। গান্ধীজী লিখছেন যে, ছোটবেলা ভূতের ভয় পেলে তিনি রাম-নাম করতেন। রাম-নাম করলে কি ভূতের ভয় যায়? আসলে ভয় ব্যাপারটি হলো মনের এক বিশেষ অনুভূতি।
স্বামী সৌমেশ্বরানন্দের ‘দৈনন্দিন জীবনে ধ্যান ও শান্তি’ থেকে