বিদ্যার্থীদের উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে মধ্যম ফল আশা করা যায়, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। ব্যবসাতে যুক্ত ... বিশদ
রসগোল্লা খেয়ে বাঙালিরা আনন্দ পায়, অথচ তামিলিরা রসগোল্লা খেতে ভালোবাসে না। গুজরাটিদের প্রিয় খাবার শ্রীখন্ড্ বাঙালিদের কাছে প্রিয় নয়। সিগারেট খেয়ে ছেলেরা আনন্দ পায়, কিন্তু অধিকাংশ মেয়েই এটিকে অপছন্দ করে। সুখ বা আনন্দ যদি রসগোল্লা-শ্রীখন্ড-সিগারেটে থাকতো, তবে সকলেই এগুলি খেয়ে আনন্দ পেতো। রসগোল্লায় কিন্তু মিষ্টি আছে; যে এটি খেতে ভালোবাসে আর যে অপছন্দ করে, সবাই এ-কথা বলবে। অর্থাৎ বলতে চাইছি, রসগোল্লায় যেমন ‘মিষ্টি’ আছে, লঙ্কায় যেমন ‘ঝাল’ আছে কাঁচা আমে যেমন ‘টক’ আছে, তেমনি ‘সুখ’ বা ‘দুঃখ’ কোনো জিনিসে নেই। আবার দেখুন, যে বিষয়টি আজ আমাদের আনন্দ দিচ্ছে, সেটি সবসময়ই আনন্দ দিতে পারে না। খুব ছোটবেলায় লজেন্স বা গ্যাস-বেলুন কিনে আনন্দ পেতাম, একটু বড় হয়ে ট্রাই-সাইকেল চড়ে আনন্দ পেতাম, আরো বড় হয়ে ঘুড়ি বা ফুটবলে আনন্দ পেতাম, পরে সিনেমা দেখে সুখী হতাম, তারপর পলটিক্স করে, এবং আরো বড় হয়ে সিরিয়াস বই পড়ে আনন্দ পাচ্ছি। তবেই দেখুন, মানুষের কাছে সুখের ধারণাটা কেমন বদলে-বদলে যায়। তাছাড়া শিশুর সুখ আর বৃদ্ধের সুখ, পুরুষের সুখ আর নারীর সুখ, সৈনিকের সুখ আর বৈজ্ঞানিকের সুখ—সুখ বা আনন্দ সম্বন্ধে মানুষের ধারণায় কত বৈচিত্র্য।
আসলে ‘সুখ’ ব্যাপারটির বিরাট অংশ জুড়ে আছে মানুষের নিজস্ব কল্পনা। মানুষের মন কতকগুলি বিশ্বাস (beliefs) ও অভ্যাসের (habits) দ্বারা নিয়মিত (conditioned)। খাওয়া-দাওয়া তথা জীবনযাত্রায় সে কতকগুলি অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়েছে এবং কতকগুলি বিশ্বাস তার মনে গভীরভাবে বসে গেছে। এই সব মিলিয়ে গড়ে ওঠে সংস্কার (impressions)। এভাবে তার শরীর ও মন বিশেষ বিশেষ প্রথা ও কার্য-কারণে কনডিশন্ড বা শর্তাধীন হয়ে পড়েছে। এই শর্তাধীন অবস্থার পেছনে কাজ করছে তার পারিবারিক ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, পরিবেশ ইত্যাদি। এইসব মিলে ফলশ্রুতি (resultant) হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে তার রুচি বা মানসিকতা। তার শরীর-মনের কনডিশনিংয়ের সঙ্গে যে বিষয়গুলি একমুখী (in unison) হয়ে পড়ে, সেই বিষয়গুলিতে সুখ আছে বলে মনে করে। ঐ বিষয়গুলি পেলে তার মনে বিশেষ ধরনের বৃত্তি জেগে ওঠে এবং ঐ বৃত্তি যখন তার শরীর-মনের কনডিশনিংয়ের সহযোগী হয়, তখনই সে নিজেকে সুখী মনে করে। এভাবেই মানুষ বিশেষ বিশেষ বিষয়ে আসক্ত হয়। এখন প্রশ্ন—‘আসক্তি’র চেহারাটা কেমন? কেউ লজেন্স খেতে ভালোবাসে, কেউ ভালোবাসে সিনেমা দেখতে, কেউ তাস খেলতে। এই আসক্তির দুটি দিক। প্রথমটি বিষয়গত (Objective)—যেমন লজেন্স, সিনেমা, তাস। দ্বিতীয়তটি ভাবগত (subjective)—অর্থাৎ সুখের বৃত্তি। আরেকটু পরিষ্কারভাবে বলা যাক। পাড়ায় যখন মাইকে হিন্দি গান চলে তখন আপনি বিরক্ত হন, কিন্তু প্যাণ্ডেলে যারা রেকর্ড চালাচ্ছে তারা আনন্দ পায়। আপনি শুধুই গানটি শুনছেন, কিন্তু ওরা (যারা রেকর্ড চালাচ্ছে) যখন গানটি শুনছে তখন ঐ গানটি যে সিনেমার, সেই সিনেমার বিশেষ দৃশ্যটি (অর্থাৎ যে নাচের সঙ্গে ঐ গানটি হচ্ছিল সেই নাচের দৃশ্যটি) তাদের মনে ভেসে উঠছে। যদিও গান ও সিনেমার দৃশ্য আলাদা (এ দুটির শুটিং আলাদা ভাবে করে পরে জুড়ে দেয়ো হয়েছে), তবুও ঐ ছেলেরা গান শুনে সিনেমার দৃশ্যটি মনে মনে দেখছে; কারণ আগে যখন তারা সিনেমাটি দেখেছিল, তখন তাদের মনে ঐ দৃশ্য ও গানটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে গেছে।