সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক, কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার বা ... বিশদ
এক ভক্ত জ্যোতির ধ্যান করতো। আত্মবিম্ব জ্যোতিকে জানবার জন্য সে খুবই ব্যাকুল হয়ে পড়লো। গুরুদেব তার অবস্থা বুঝতে পেরে তার নিকট উপস্থিত হলেন। ভক্ত সেবাধর্ম ত্যাগ দিবারাত্র জ্যোতির ধ্যানে মগ্ন। গুরুদেব তার ধ্যান ভঙ্গ করার জন্য তাকে ডাকলেন। কিন্তু ভক্তের ধ্যান ভঙ্গ হলো না। তাই গুরুদেব ফিরে গেলেন। তিনি আশ্রমে এসে আসনে বসে ভক্তের মঙ্গল কামনা করতে লাগলেন। ওদিকে ভক্তের ধ্যান যখন গাঢ় হলো তখন ওই আত্মবিম্ব জ্যোতি থেকে রাজরাজেশ্বরী রূপে জ্যোতির্ময়ী মাতৃরূপ তার সম্মুখে উপস্থিত হলেন। মা ওই ভক্তকে বললেন, তুমি যাঁকে অন্বেষণ করছো ওই জ্যোতি আমিই। মায়ের বাণী শ্রবণ করবার পরই ভক্তের ধ্যান ভঙ্গ হলো এবং আনন্দে তার হৃদয় ভরে উঠলো। ভক্ত (শিষ্য) তখন গুরুর অন্বেষণে বের হলো। গুরুর সাক্ষাৎ পেয়ে তার উপলব্ধির কথা বলতে গিয়ে আবার তার সমাধি হলো। কিছুক্ষণ পর তার সমাধি ভঙ্গ হলে বাহ্যিক জ্ঞান ফিরে এলো। গুরুদেব শিষ্যকে বললেন—যা ব্যাটা, তোর জনম ধন্য। তোকে আর এ সংসারে আসতে হবে না। তোর মনের নির্বাণ হয়েছে। শিষ্য গুরুর কথা শুনে কিছুই বুঝতে পারলো না। সে গুরুদেবকে জিজ্ঞেস করলো—“গুরুদেব নির্বাণ কার হলো এবং সে কে? আমি এসব কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি এমন কি অন্যায় করলাম যে আমি আর আপনার কাছে স্থান পাব না?” শিষ্যের কথা শুনে গুরুদেব বললেন—“ওরে ব্যাটা, তুই তো খুব চালাক, তুই গুরুকে জানতে চাস। তবে শোন, তুই যা পেয়েছিস সে সবই অর্পণ করতে হবে, তারপর গুরুর কৃপায় সব জানতে পারবি। তবে একটা কথা জেনে রাখ্, গুরুকে জানতে পারলে আর কিছু জানার বাকি থাকবে না।” তারপর শিষ্য গুরুদেবকে জিজ্ঞেস করলো—“গুরুদেব, আমাকে দয়া করে বলুন, আমি কি গুরুকে উপলব্ধি করতে পারবো?” তখন গুরুদেব বললেন—“গুরুকে জানা খুবই কঠিন। কারণ গুরু হলেন মূল, আর মূলকে জানা অনেকেরই ভাগ্যে হয় না। গুরুকে জানতে হলে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর এবং ব্রহ্ম-আত্মা-ভগবান সকলকেই জানতে হবে। তুই এক কাজ কর, তুই আজ থেকে ভগবানের সাধনায় রত হ। তা হলে ভগবানের কৃপায় ধীরে ধীরে গুরুর মহিমা সবই উপলব্ধি করতে পারবি। তোর মন যদি গুরুমুখী হয় তবে তোর আর কিছুই জানতে বাকি থাকবে না।” তাই বলি—ভক্তের ভাব এমনই হওয়া উচিত, যার ফলে ভগবান ছাড়া তার আর কোন কিছুতেই জানার প্রবৃত্তি না থাকে। এর ফলে ভগবানও ওই ভক্ত ছাড়া থাকতে পারবেন না। যেমন—বৃন্দাবনে যে সব ভক্ত ছিল, তারা কেউই কৃষ্ণ ছাড়া থাকতে পারতো না। তারফলে বৃন্দাবনে ওই সময় ভাবের জোয়ার বয়ে গিয়েছিল। ওই বৃন্দাবনের ভক্তগণের জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নয়ন জলে শ্যামকুণ্ডের সৃষ্টি হয়েছিল। এদিকে শ্রীকৃষ্ণের জন্য শ্রীমতি রাধার নয়ন জলে রাধাকুণ্ডের সৃষ্টি হয়েছিল। হয়তো তোমরা বলবে যে রাধা ছাড়া বৃন্দাবনে কি আর কোন ভক্ত ছিল না! রাধার মতো অনেকেই ছিল, কিন্তু কেউই আর বৃন্দাবনের রাধা হতে পারেনি। তাই রাধাকে নিয়ে সখীগণের বৃন্দাবন লীলা। বৃন্দাবনে যে লীলা হয়েছিল তা শুধু বৃন্দাবনের ভক্তদের জন্যই হয়নি, তা সমস্ত মানুষের শিক্ষার জন্যই হয়েছে। কিন্তু মানুষ ওই লীলাকে ভুল বুঝেছে। যেমন—ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যে যোগ শিক্ষা দিয়েছিলেন তা সকল মানুষকে লক্ষ্য করেই। মানুষ কিন্তু উলটো বুঝে কর্ম শুরু করে দিল। তারা গীতা পাঠ করে ভগবানের কর্ম শেষ করতে বসলো। আজকাল সকলেই বলে যে গীতা একটি বড় গ্রন্থ, কিন্তু গীতা পাঠ করে কতজন বড় হয়েছে বা কতজন ত্যাগী এবং জ্ঞানী হয়েছে? আসল কথা গীতা একটি পবিত্র গ্রন্থ। একে না বুঝে শুধু মুখস্থ করলে কি হবে? অর্জুন বলতে সকল মানুষকেই বোঝায়। কিন্তু অনেকের ধারণা, অর্জুন একটি মানুষের নাম। এই ধারণা নিয়ে মানুষ গীতাকে গল্প গ্রন্থ ভেবে মুখস্থ করে বসে আছে।