পেশা ও ব্যবসায় অর্থাগমের যোগটি অনুকূল। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ... বিশদ
সত্ গুরু সঙ্গত তরতা হৈ।
কহৈঁ কবীর, কোই বিরল হংস
জীবত হী জো মরতা হৈ।।
জীবনে কৃতিময় অহং বিলুপ্তিই বিজ্ঞানী মৃত্যু। অনন্ত জন্ম-মৃত্যুর শৃঙ্খল হইতে নিজেকে মুক্ত করিতে প্রথমেই প্রয়োজন বিজ্ঞানী মৃত্যুর। দেহত্যাগ তো আর মৃত্যু নয়, উহা দেহান্তর মাত্র। গীতার কথায়—‘‘বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় নবানি গৃহ্নাতি।’’ বিজ্ঞানী আচার্য্যকুল তাঁহার সন্তানদের শিক্ষা দেন বিজ্ঞানী মৃত্যু। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ ‘‘মন্মনাভব মদ্ভক্ত’’, ‘‘সর্ব্বধর্ম্মান্ পরিত্যজ্য’’ ‘‘ময্যর্পিত মনোবুদ্ধিঃ’’ ইত্যাদি বাক্যদ্বারা এবং বিশ্বরূপাদির অনুভূতির দ্বারা অর্জ্জুনকে শিক্ষা দিয়াছেন বিজ্ঞানী মৃত্যুর ধারা।
আত্মসংজ্ঞাপি—নির্যানশক্তিসম্পন্ন এই আচার্য্যকুল সামগ্রিক জীবনে নিজের সাধনাকে রূপায়িত করিয়া নিজেরাই হন পরিতৃপ্ত। ইঁহারাই সন্তানদের মধ্যে দেখেন নিজেরই ব্যষ্টিরূপ আর নিজের মধ্যে দেখেন সন্তানদের সমষ্টি রূপ। ইঁহাদেরই সেবক ভার। ইঁহারাই সন্তানদের (শিষ্যদের) শিক্ষা দেন যথাযথ ভগবদ্পূজা। ইঁহারাই পরম গোপনীয় আধ্যাত্মিক তত্ত্ব ও কর্ম্মধারা অকপটে সন্তানদের (শিষ্যদের) নিকট প্রকাশ করেন। গীতায়ও অর্জ্জুনকে শ্রীকৃষ্ণ এই কথাই বলিয়াছেন—
সর্ব্বগুহ্যতমং ভূয়ঃ শৃণু মে পরমং বচঃ।
ইষ্টোহসি মে দৃঢ়মিতি ততো বক্ষ্যামি তে হিতম্।।
(সর্ব্বপ্রকার গোপন হইতেও গোপনীয় আমার পরম বাক্য (পরমপুরুষার্থ সাধনবাণী) পুনরায় শ্রবণ কর। তুমি আমার একান্ত প্রিয়, এজন্য তোমাকে হিতবাক্য বলিব।)
আত্মকেন্দ্রিক—ইঁহাদেরই জগতে সেব্য হইয়া বাঁচিয়া থাকিবার ভাব। ইঁহারাই প্রচার করেন ‘‘গুরু (আচার্য্য) ভগবান’’, ‘‘নাদ্বৈত গুরুনা সহ’’ (আচার্য্যের সহিত অদ্বৈত বোধ রাখিবে না) ইত্যাদি। এবং সন্তানদের পূজার আসনে দেন নিজের প্রতিকৃতি এবং ধ্যানের জন্যও দেন নিজের প্রতিকৃতি কল্পনারই নির্দেশ। ইঁহাদের জীবনেই দেখা যায় অকপট আচরণের অভাব। প্রায়ই স্বীয় অধ্যাত্মকর্ম্মের আচরণ ও সন্তানদের প্রতি আত্মিক কর্ম্মোপদেশ এ দুইটির মধ্যে কোন সঙ্গতি থাকে না। যে সহজ কর্ম্মরূপী অজপা ও নাদসাধনায় আচার্য্য নিজকে নিয়ত শুদ্ধ রাজযোগে প্রতিষ্ঠিত করিয়া রাখিতেছেন, উহার বিন্দুমাত্র জ্ঞানও স্বেচ্ছায় তাঁহাদের মুক্তিকামী সন্তানদের দান করিতে যেন তাঁহারা কুণ্ঠাবোধ করেন। নিজের পদগৌরবের লোভই এই আত্মকেন্দ্রিকতার কারণ। অধ্যাত্মজ্ঞানহীন সাধারণ জীবন এ সকল আচার্য্যদের অবচেতন মনের সূক্ষ্ম কৃতিময় অহংজাত চতুর আচরণকে সম্যক্ বুঝিতে পারে না। অনেক সময় তাহারা নিজেরাও উহা উপলব্ধি করিতে না পারিয়া নিজে যেমন ভ্রান্ত পথ অবলম্বন করে, তেমন অন্যকেও সেইভাবে পরিচালিত করে। ইহাদের লক্ষ্য করিয়াই কবীর দুঃখ করিয়া বলিয়াছেন—
‘‘কোই বিরল হংস— জীবত হী জো মরতা হৈ’’।
আত্মবিলম্ভাজ্ঞ—এই শ্রেণীর আচার্য্যেরাও সহজ মানুষ। স্বীয় সাধনাকে সামগ্রীক জীবনে রূপায়িত করিতে তাঁহাদেরও একটা আন্তরিক প্রচেষ্টা রহিয়াছে।
মহর্ষি প্রেমানন্দের ‘গীতায় ভগবান’ থেকে