বিদ্যায় সাফল্যও হতাশা দুই বর্তমান। নতুন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠবে। কর্মপ্রার্থীদের শুভ যোগ আছে। কর্মক্ষেত্রের ... বিশদ
কিন্তু পরে ধর্মের ব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মের অনেক রূপ লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আচার্য এসেছেন, সত্যদ্রষ্টা ঋষি এসেছেন, তাঁরা সত্য যেমন যেমন উপলব্ধি করেছেন, তেমন তেমন তাঁরা বলেছেন। তাঁদের অনুগামী যাঁরা, তাঁরা আবার নিজেদের গুরুর কাছে যা শুনেছেন এবং নিজেদের মনে যেটি ভাল লেগেছে, তাকে কেন্দ্র করে এক একটি গোষ্ঠী তৈরি করেছেন। এভাবে স্বতন্ত্র দল তৈরি হয়েছে, নানা মত তৈরি হয়েছে, স্বতন্ত্র নানা পথ তৈরি হয়েছে। তাই আমরা দেখতে পাই, ভারতে সনাতন ধর্মে প্রধানতঃ দুটি ভাগ, ‘শ্রুতি’ ও ‘স্মৃতি’। শ্রুতিতে পাওয়া যায় ‘এষ ধর্মঃ সনাতনঃ’। শ্রুতিতে যে সত্য বলা আছে, সে সত্য এমনই সত্য যে, সে সত্য কখনও পরিবর্তিত হয় না। স্মৃতি পাল্টে যায়। দেশ, যুগ এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী সেগুলি পরিবর্তিত হয়। মানুষ তার বুদ্ধির দ্বারা, তার বিবেচনার দ্বারা স্মৃতি তৈরি করেন, রচনা করেন এবং তার নির্দেশনাও দিয়ে থাকেন। কিন্তু শ্রুতিতে যা পাওয়া যায়, সে বিষয়ে কখনও ভাবলে চলবে না যে, সেটি মানুষ চিন্তা করে তৈরি করেছে। শ্রুতি দ্বারা যে সত্য অনুভূত হয় তাকে বলা হয় ‘Revelation’। সেই সত্য ‘প্রকাশিত’ হয় পবিত্র, শুদ্ধ, অপাপবিদ্ধ মনে। ঠাকুর বলেছেন— ‘শুদ্ধ মনবুদ্ধির গোচর’। ‘মনসৈবেদমাপ্তব্যং নেহ নানাহস্তি কিঞ্চন’। —মনের দ্বারাই এই ব্রহ্ম উপলভ্য; এই ব্রহ্মে অণুমাত্রও ভেদ নাই। ঠাকুর এসে আরও পরিষ্কার করে এখানে ধরিয়ে দিচ্ছেনঃ ‘এই শুদ্ধ মন-বুদ্ধি দিয়েই হয়’। ‘মন তোর’ মন্ত্র বলছেন শ্রীরামকৃষ্ণ। এই ‘মন তোর’ হয়ে মন যখন শুদ্ধ হয়, তখন সেই সত্য শুদ্ধ মন-বুদ্ধির গোচর হয়। শ্রুতিতে শুধু যা প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলি শ্রুতির কথা। আর স্মৃতি পরিবর্তনীয়। কিন্তু স্মৃতি অনুসরণ করে, স্মৃতিকে ধরে আমাদের কত রকম বাদানুবাদ। এই নিয়ে মোটা মোটা বই লেখা হচ্ছে, ব্যাখ্যা হচ্ছে, ভাষ্য হচ্ছে, চলছে নিরন্তর তর্ক-বিতর্ক।
স্বামী আত্মস্থানন্দজী ‘এক নতুন মানুষ’ থেকে