বিদ্যায় সাফল্যও হতাশা দুই বর্তমান। নতুন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠবে। কর্মপ্রার্থীদের শুভ যোগ আছে। কর্মক্ষেত্রের ... বিশদ
মানুষের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক ওতপ্রোত। কেমন ওতপ্রোত? কতদিনের সম্পর্ক? উত্তরে যদি বলা যায়— যতদিন মানুষ ততদিন ধর্ম, তবে খুব ভুল হবে না। Encyclopaedia Britannica বলছেঃ “Man it has been said, is incurably religious.” সংজ্ঞাটি বেশ মজার। এ কেমন একটি ব্যাধি যে ব্যাধি থেকে মুক্ত হওয়া যায় না। আমরা যদি ধর্মের ইতিহাস পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখতে পাব যে, ধর্মের রূপের পরিবর্তন হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন যুগে, ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে। ফলে তার চেহারা পাল্টেছে ঠিকই, কিন্তু স্বরূপ বদলায়নি। এমন কোন যুগ দেখা যায় না যেখানে মানুষ আছে অথচ ধর্ম নেই। তার কারণ কি?
ধর্মের কথা বলতে গিয়ে স্বামীজী ভারি সুন্দর উদাহরণ দিয়ে আরম্ভ করেছেন। একটা মস্তবড় রেলগাড়ি আর একটা পিঁপড়ে রেল লাইনের উপর, পিঁপড়েটি একটা সামান্য জীব। রেলগাড়িটা দ্রুত বেগে আসছে। পিঁপড়েটা সরে গেল। একটা হয়তো পাখি বসে ছিল, রেলগাড়িটা দেখে সে উড়ে গেল। স্বামীজী ব্যাখ্যা করে দেখাচ্ছেন, একটি প্রাণী সে যত ক্ষুদ্রই হোক, তার এই নিজস্ব শক্তিটুকু আছে। কিন্তু এই যে বিরাট যন্ত্র, যার এত বেশি শক্তি, সে ছুটে চলেছে। কিন্তু ছুটে চলার পিছনে তার নিজস্ব কোন শক্তি নেই। সে সঞ্চালিত। তাকে কেউ চালাচ্ছে, তবেই সে চলছে। কারণ অতবড় একটা যন্ত্রদানব হলেও, সে কিন্তু জড়। আর এই যে সামান্য প্রাণী— সে চেতন। আবার মানুষের দিকে যখন তাকাই, তখন দেখি— সে রেলগাড়ি তৈরি করেছে, রেল ইঞ্জিন তৈরি করেছে। তার ভিতরে আরও অনেক বেশি শক্তির প্রকাশ। মানুষ দুর্বার গতিতে অনন্তকালের প্রবাহে ছুটে চলেছে। কত রকম প্রচেষ্টা, কত সংগ্রাম— যুগ যুগ ধরে মানুষ করেই চলেছে। কিসের জন্য তার এই সংগ্রাম?
মানুষ যখন এই বিষয়ে চিন্তা করতে শুরু করে, তখন সে কি দেখতে পায়? দেখতে পায় যে, তাকে যেন কত বন্ধনে আটকে রাখা হয়েছে। কালের বন্ধন, ব্যবধানের বন্ধন এবং আরও কত রকমের বন্ধন। তার অনেক কিছু সে বুঝতেও পারে না, জানতেও পারে না। কিন্তু সে বুঝতে চায়, জানতে চায়। মানুষের মন যত সূক্ষ্ম হয়, যত তার ভিতরের আত্মশক্তির প্রকাশ হয়, তত সে সমস্ত বন্ধনকে ভেঙে ফেলতে চায়। সে নিজে অনন্ত হতে চায়, স্বাধীন মুক্ত হতে চায়। কিন্তু একসময় সে দেখে যে, সে অসহায়। আর এগুতে পারছে না। আর কিছু ধরতে পারছে না, মনে হয় যেন থেমে যাচ্ছে। তবুও সে সংগ্রাম করছে। সে দেখছে যে, আমি চেষ্টা করছি, বুঝতে পারছি যে, আমি যা চাই, তা আমার হলো না। আমি যা চাই তা পেলাম না। এত রূপ-রসে ভরা এই সুন্দর জগৎ। কিন্তু তবু মনে হচ্ছে— না, না, তাতে আমার পেট ভরছে না। বুঝতে পারছি— আরও যেন কিছু আছে। আরও বড়, আরও সুন্দর।