কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীর ঈর্ষার কারণে সম্মানহানি হবে। ব্যবসায়ীদের আশানুরূপ লাভ না হলেও মন্দ হবে না। দীর্ঘ ... বিশদ
জনৈক ভক্ত গুরুজীকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে সে কিভাবে মানুষকে সাহায্য করবে, তার উত্তর দিতে গিয়ে গুরুজী বললেন— “শুধু তাদেরই সাহায্য করবে, যাদের সাহায্য করবার কেউ নেই, এবং যাদের সাহায্যের খুবই প্রয়োজন। যাকে সাহায্য করবার জন্য তার নিজের পরিবার ও সক্ষম আত্মীয়স্বজন আছে, তাকে সাহায্য করতে যাওয়া খুবই ভূল। এতে তাকে লোভী বানিয়ে দেওয়া হয়। তার সবার থেকে সাহায্য চাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। যথার্থ ধর্ম মানুষকে তার নিজের পায়ের ওপর দাঁড়াতে শেখায়।”
ভক্ত গুরুজীর পায়ের সামনে বসেছিল। গুরুজী আজ মনের সম্বন্ধে কথা বলছিলেন। তিনি বলতে লাগলেন— “মন চিন্তার সমষ্টি ছাড়া আর কিছুই নয়। যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করিস, তাহলে দেখবি যে এই চিন্তাগুলি জাগতিক বস্তু ছাড়া কিছুই নয়, যাকে আমরা নিজেদের থেকে বেশী দামী বলে ভাবি। কিন্তু যে মুহূর্ত্তে আমরা এই জাগতিক বস্তুগুলি থেকে নিজেদের বেশী দামী বলে জানতে পারব, তখনই দেখব এই কামনা-বাসনা, যা আমাদের অশান্তি-দুঃখ-যন্ত্রণার কারণ হয়েছিল, তা অদৃশ্য হয়েছে এবং তখনই আমরা পূর্ণ শান্তির অধিকারী হতে পারব।”
“আত্মা একটা স্থির মঞ্চ যার উপর আমাদের চিন্তা ও কামনা-বাসনাগুলি নেচে বেড়াচ্ছে। আমাদের চিন্তাগুলি তরঙ্গের মত এক একবার নেমে এসে আত্মার ভূমিকে স্পর্শ করছে এবং আবার উঠে যাচ্ছে। যে মুহূর্ত্তে গুরুর তীব্র আকর্ষণে সেই চিন্তাতরঙ্গ এসে আত্মার সাথে মিশে যাবে, তখনই মনের (যা কিছু কামনা-বাসনা ও চিন্তার সমষ্টি) নাশ হবে, এবং তখনই আমরা পূর্ণ, আদর্শ মানুষ হয়ে উঠব।”
সকাল ১০টা। ভক্ত গিয়ে গুরুজীকে প্রণাম করলে গুরুজী তাকে বসতে বললেন। ভক্ত যথাস্থানে উপবিষ্ট হলে গুরুজী তেজোদীপ্ত কন্ঠে বললেন— “সাহসী, নির্ভীক হও। সব সময় সত্য কথা বলার চেষ্টা করবে। জগতের মানুষ সর্বদা অপরকে খুশী করে নিজের স্বার্থপূরণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু যে সর্বদা সত্যে থাকে, এবং নিজের আদর্শের বিনিময়ে অন্যকে খুশী করার চেষ্টা করে না, তার পথ কন্টকাকীর্ণ। কিন্তু প্রথম পথটি অস্থায়ী, সেই পথ যারা বেছে নেয়, তাদের ধ্বংস অনিবার্য। দ্বিতীয় পথের পথিকেরা অমর হয়ে যান।”
আজ গুরুজী গুরুতত্ত্ব সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বললেন— “নির্গুণ ব্রহ্ম কোন কাজ করতে পারে না। কারণ তাতে দ্বিতীয় কোন বস্তু নেই। কোন কার্য করতে হলে বা কারো উপকার করতে হলে বা কাউকে উদ্বুদ্ধ করতে হলে নির্গুণ ব্রহ্মকে সগুণ ব্রহ্মের সাহায্য নিতে হয়, কারণ মাধ্যম ছাড়া শুধুমাত্র জ্ঞান দিয়ে কিছু করার উপায় নেই। যেমন ডাক্তারের কাছে কেবল ডাক্তারীর জ্ঞান থাকলেই হবে না, রোগ সারাতে হলে ঔষধ, ছুরী এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতির সাহায্যে নিতে হয়। ঠিক তেমনই অজ্ঞানীর অজ্ঞান নাশ করতে হলে নির্গুণ ব্রহ্মকে গুণান্বিত হয়ে তাকে নির্গুণে নিয়ে যেতে হয়। অজ্ঞান নাশ করার সাথে সাথে নির্গুণ তার স্বরূপে ফিরে যায়। তখন যা ছিল তাই।”