কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
কর্ম না করলে কি চলে? ভগবানই আমাদের কাজের মধ্যে রেখেছেন— তিনিই ইচ্ছা করলে আমাদের কর্মের পাশ কেটে দিতে পারেন। নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকলেই কি কর্মপাশ কাটে? আর নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকবার জো কি? সেইজন্য আমাদের তাঁরই কর্ম জেনে কর্তৃত্বাভিমান ত্যাগ করে কাজ করতে হবে।
গুণ গ্রহণ করবার ক্ষমতার নাম পাণ্ডিত্য। ভগবান সকলের গুণ গ্রহণ করেন। আর যিনি ঐরূপ করেন, তিনিও তাঁর দাস— পণ্ডিত।
ভগবানের দয়া না হলে ঠিক ঠিক কর্ম হয় না; তিনি যাঁর প্রতি কৃপা করেন, তাঁকে দিয়ে কর্ম করিয়ে নেন। হিংসা করলে কি হবে— যিনি কর্মী, তিনিই বড় হন। ‘অমুকের মত বড় হব’ মনে করলেই কি বড় হয়? তাঁরা কত দুঃখ-কষ্ট স্বীকার করেছেন, তবে না বড় হয়েছেন! কর্মহীন ব্যক্তিকে ভগবান ঘৃণা করেন। পৃথিবী কর্মক্ষেত্র। যে বেশী কর্মী, তাঁকেই বেশী করে খেতে-পরতে দেন। কর্মতেই বড় করে, আবার কর্মতেই ছোট করে। মানুষ কি আর ভাল-মন্দ আছে? —কর্মই হল প্রধান। কর্মের জন্য কেউ বা পূজা পাচ্ছে, কেউ বা গাল খাচ্ছে। যাঁরা কর্ম করে পূজা পান, তাঁরাই ধন্য। যাঁরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেন, তাঁরা বলেন কর্ম না করলে কি চলে? ভগবানই কর্ম লিখেছেন— তিনিই আবার কর্ম কাটেন। ‘করম্সে’ করম কাটে। কর্মের দ্বারা চিত্ত-শুদ্ধি হয়। কর্মের দ্বারাও ভগবানকে বুঝা যায়।
যার ভোগ আছে সে ভুগবেই। বাধা দিলে কি হবে? মাঝে থেকে অপরের বিষ-নজরে পড়া। ভগবানকে নিয়ে পড়ে থাক, তা হলেই কল্যাণ হবে।
ভগবান জীবের কর্ম দেখেন, জন্ম দেখেন না। বামুনের ঘরে জন্মে যে সৎকর্ম না করে, তাতে কি হবে? নীচ ঘরে জন্মে যে সৎ কর্ম করে, ভগবানকে ভক্তি-বিশ্বাস করে, তার জন্ম সার্থক!
জীব কর্ম করতে বাধ্য। সৎ কাজ করলে নিজেরও কল্যাণ, পরেরও কল্যাণ। আর অসৎ কাজ করলে নিজের এবং অপরের সকলেরই অকল্যাণ।
কর্মের দ্বারা জীব হয়, কর্মের দ্বারাই দেবতা হয়।
কার দ্বারা ভগবান কি কর্ম করান তার কি কিছু ঠিক আছে?—
পঙ্কে বদ্ধ কর করী, পঙ্গুরে লঙ্ঘাও গিরি,
কারে দাও মা ব্রহ্মপদ, কারেও কর অধোগামী।
(সকলি তোমার ইচ্ছা, ইচ্ছাময়ী তারা তুমি)
ভগবানকে প্রাণভরে ডাকলে তিনি সব বুঝিয়ে দেন। বাজে গল্প না করে ভগবৎ-চর্চা ও শাস্ত্রালোচনা কর, নিজেরই কল্যাণ হবে। এমন কর্ম করতে হয়, যাতে ভগবান খুশী। যতদিন বাঁচতে হবে, ততদিন কর্ম করতেই হবে। কর্ম না করে উপায় নেই। সাধুরা ভগবানের কর্ম করেন, গৃহস্থেরা সংসারের কর্ম করেন; তবে যদি ভগবানে মন থাকে, তা হলেই বাঁচোয়া।
মানুষ সবই এক, কেবল কর্মেই পৃথক করেছে। ভগবানকে যতটুকু দেবে, ততটুকু পাবে। চার আনা দাও, চার আনা পাবে; ষোল আনা দাও, ষোল আনাই পাবে। অসৎ কাজ করলে ভয় আসবে— দুঃখ পাবে। সৎ কাজ করলে ভগবানের দিকে মন যায়, শান্তি পায়। সৎকর্মী নির্ভীক হয়।
কর্মের পথ ও মত কারুর মিল হয় না। তবে উদ্দেশ্য সকলেরই এক হতে পারে। যে কর্মের পথ ও মত মিল করতে চায়, সে নির্বোধ।
স্বামী অদ্ভুতানন্দের বাণী ‘সৎকথা’ (স্বামী সিদ্ধানন্দ সংগৃহীত) থেকে