ব্যবসায় বাড়তি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত সাফল্য নাও দিতে পারে। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি। শ্বাসকষ্ট ও বক্ষপীড়ায় শারীরিক ক্লেশ। ... বিশদ
ধর্মশাস্ত্র হ’তে হ’লে বেদান্তের শিক্ষাগুলিকে খুবই বাস্তবমুখী হ’তে হবে, কারণ যেখানে অনুমান শেষ হয় সেখানেই সত্যিকারের ধর্মের সূচনা হয়। বেদান্ত শুধু সর্বোত্তম দর্শনের মূলনীতিগুলিকেই তুলে ধরে না, এ ব্যবহারিক পদ্ধতিগুলিও শিক্ষা দেয়, যা একে ধর্মশাস্ত্র করার জন্য প্রয়োজন হয়। যদি বেদান্তের আদর্শ সকল জীবনের সর্বক্ষেত্রকেই এর অন্তর্ভুক্ত না করে, যদি সেগুলি আমাদের প্রতিটি চিন্তাস্তরে প্রবেশ না করে, শুধু তাই নয় তারা যদি আমাদের গৃহীজীবন, সমাজজীবন, কর্মজীবন, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে অনুপ্রবেশ না করে, তবে আমরা সেগুলিকে শুধু কল্পনাপ্রসূত দার্শনিক বিষয়ের সিদ্ধান্ত ব’লে প্রত্যাখ্যান অবশ্যই করব এবং বেদান্তকে ধর্মশাস্ত্র ব’লে আখ্যা অবশ্যই দেব না। বস্তুতঃ বেদান্তের আদর্শগুলি তাদের প্রয়োগক্ষেত্রে এত উদার ও সর্বজনীন যে বিগত চার হাজার বছর ধরে বনে ও পর্বতগুহায় অবসর জীবনে বসবাসকারী নরনারী এবং সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনে অতি দায়িত্বপূর্ণ পদে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা তাদের জীবন ঐ আদর্শগুলির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সমর্থ হয়েছে আর এইভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ঐ আদর্শগুলি খুবই বাস্তবমুখী। কতক লোকের মনে এরূপ ধারণা আছে যে, বেদান্তের শিক্ষা শুধু সেই ধরনের মানুষের উপযোগী যারা অরণ্যে ও পর্বতগুহায় তপস্যার জীবনযাপন করে, কিন্তু যারা আমেরিকার মতো কর্মব্যস্ত জীবনযাপন করে তাদের জন্য এগুলি নয়। এরূপ লোকেরা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত, কারণ তারা জানে না যে, বেদান্তের সত্যসমূহ প্রথম আবিষ্কৃত ও ব্যবহৃত হয়েছিল যোগী তপস্বীদের দ্বারা নয়, যারা অরণ্য বা পর্বতগুহাতে বাস করত; পরন্তু তা হয়েছিল রাজা, মহারাজা এবং মন্ত্রী ও রাজনীতিজ্ঞদের দ্বারা যাঁরা, যতটা কল্পনা করা যায় এমন নিরতিশয় কর্মব্যস্ত ও বিলাসের জীবনযাপন করতেন। যদি আমরা উপনিষদসমূহ, রামায়ণ-মহাভারত কাব্যদ্বয় ও অন্যসব ঐতিহাসিক গ্রন্থ পড়ি, তবে আমরা দেখতে পাই যে, শুধু হিন্দু মন্ত্রী ও রাজনীতিবিদরাই নন, সিংহাসনে অধিষ্ঠিত রাজন্যবর্গ, যাঁরা রাজ্যের রাজকীয় কার্য পরিচালনা করতেন ও প্রজাবর্গের কল্যাণকার্যে নিযুক্ত থেকে বর্তমানের সাধারণ কর্মব্যস্ত ও দায়িত্বপূর্ণ জীবনযাপন করতেন। তাঁরাও বেদান্ত অধ্যয়ন ও এর মহান নীতিগুলি বাস্তবজীবনে রূপায়িত করবার প্রচুর সময় ও সুযোগ পেতেন। বেদান্তের আদর্শ জীবনযাপন করতে যখন এরূপ ব্যক্তিরাও সক্ষম হতেন, তখন আমাদের কথা আর কি বলব? আমরা তাঁদের অর্ধেক পরিমাণও কর্মব্যস্ত নেই। উপনিষদ্ হ’তে আমি বহু হিন্দু নৃপতির নামের উল্লেখ করতে পারি, যাঁরা তাঁদের রাজকার্যসম্পাদনের সঙ্গে সঙ্গে বেদান্তের উপদেশগুলিকে নিষ্ঠার সঙ্গে অনুসরণ করতেন। তাঁরা নিজেরাই শুধু বেদান্তের আদর্শমতো চলতেন না, তাঁরা অপরকেও এ আদর্শের শিক্ষা দিতেন, আর জনসমাজ তাঁদের এই কার্যকরী দর্শনশাস্ত্রের আদর্শের জীবন্ত উদাহরণ ব’লে বিবেচনা করত। যাঁরা ভগবদ্গীতা বা ‘সং সেলেশ্চিয়াল’ (Song Celestial), যেমনটি স্যার এডুয়িন আর্ণল্ড নামকরণ করেছেন, পড়েছেন তাঁদের স্মরণে আছে যে একটা বিরাট সৈন্যবাহিনীর প্রখ্যাত অধিনায়ক, যুদ্ধক্ষেত্রে দণ্ডায়মান থেকে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ভয়ঙ্কর কোলাহলের মধ্যেও বেদান্তের আদর্শের আলোচলা করার জন্য সময়-সুযোগ করে নিয়েছিলেন, আর ঐ আদর্শগুলি বাস্তবে রূপায়িত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।