কর্মলাভের যোগ আছে। ব্যবসায় যুক্ত হওয়া যেতে পারে। কর্মক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রশংসা জুটবে। ... বিশদ
ভগবান শঙ্করাচার্য এই বিষয়ে বলিতেছেন, “জীবন্মুক্তি সুখপ্রপ্তির্হেতবে জন্মধারিতম্, আত্মনা নিত্যমুক্তেন ন তু সংসার কাম্যয়া।”
ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণদেব এই কথাই আবার এইভাবে বলিতেছেন, “দুর্লভ মনুষ্যজন্ম লাভ ক’রে ঈশ্বরলাভ যদি না হয় তো জন্ম ধারণ করাই বৃথা হইল।”
মনুষ্যজন্মই হউক বা মনুষ্যেতর জন্মই হউক, শরীরধারণ করিলেই কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য—এই ছয় রিপুর কম-বেশি অধীনতা না মানিয়া উপায় নাই। কিন্তু তৎসত্ত্বেও মনুষ্যজন্মে আমরা পাই বিভিন্ন নরনারীতে ন্যায় ও অন্যায়ের কম-বেশি বিবেক। এই বিবেক আরও জাগ্রত করবার সম্ভাবনা বিশেষ করিয়া মনুষ্যজন্মেই, সদ্গুরু ও সৎশাস্ত্র এই বিবেক উদ্রেকের প্রকৃত হাতিয়ার। তাই সৎসঙ্গের উপর জোর দিয়াছেন মহাপুরুষ বা আধ্যাত্মিক শাস্ত্র। শাস্ত্রের চাইতে চেতনবান মানুষের সঙ্গের উপর আরও জোর দিয়াছেন শাস্ত্র বা গুরু নিজেই।
নিজে পড়িয়া শাস্ত্রার্থ উদ্ঘাটন করা অতীব কঠিন অর্থাৎ এক প্রকার অসম্ভবই বলিয়া নির্দিষ্ট হইয়াছে। নিম্নলিখিত শ্লোকেই তাহা ব্যক্ত হইয়াছে—“শব্দজালং মহারণ্যং চিত্তবিভ্রমকারণম্” ইত্যাদি।
ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলেছেন, “পড়ার চেয়ে শোনা ভাল, শোনার চেয়ে দেখা ভাল।” এখন কথা হইতেছে উপরোক্ত সূত্রটির মর্মার্থ যদি এইস্থানে আলোচিত হয় তো প্রত্যেক পাঠক পাঠিকার স্বাধীন এবং নিজস্ব চিন্তাধারার একটা সুযোগ বা সুবিধা আসিবে যাহাতে এই আলোচনাটির যৌক্তিকতা কোনও একদেশী বা সাম্প্রদায়িক পর্য্যায়ভুক্ত হইল কিনা তাহার বিচার করিয়া দেখা যাইবে। প্রকৃত সত্য কখনই একদেশী বা সাম্প্রদায়িক হইতে পারে না তাহা সর্বদেশী সর্বকালিক ও অসাম্প্রদায়িক।
পড়া বলিতে বুঝিব—কী গ্রন্থ পড়িতে বলিতেছেন? এখানে উপনিষদের কথায় আসিয়া পড়িলাম—“দ্বে বিদ্যা পড়া চ অপরা।” অর্থাৎ পরা বিদ্যা, অপরা বিদ্যা দুইটি বিদ্যা মনুষ্যকুলের সামনে খোলা আছে যাহা পড়িতে হইবে, জানিতে হইবে, অধিগত করিতে হইবে। অপরা বিদ্যার অন্তর্গত কল্প, নিরুক্ত, ছন্দঃ, জ্যোতিষ, ব্যাকরণ, শিক্ষা ইত্যাদি ছয় প্রকার যাহাদেরকে বেদাঙ্গও বলা হয়। আর পরাবিদ্যার অর্থ ব্রহ্মবিদ্যা যাহাই আবার আত্মজ্ঞান নামে অভিহিত হয়।
এখন বেদ ও বেদাঙ্গ বলিয়া দুইটি ভাগের কথা আমরা পাই। বেদাঙ্গের কথা আমাদের আলোচনার বিষয় নহে, কারণ নিশ্চয়ই ভগবান্ শ্রীরামকৃষ্ণদেব সেই সব গ্রন্থপাঠের কথা বলিতেছেন না। তিনি বলিতেছেন বেদ অধ্যয়নের কথাই। এ দিকে আমরা দেখিতে পাই চারিটি বেদের ভিতর প্রত্যেকটির আবার দুইটি করিয়া ভাগ আছে, একটি হইতেছে কর্মকাণ্ড ও অপরটি হইতেছে জ্ঞানকাণ্ড তথা উপনিষদ ও অদ্বৈত বেদান্ত।
পড়ার চাইতে শোনা ভাল—এ কথার তাৎপর্য কী? অর্থাৎ নিজে পড়িয়া অধ্যাত্মশাস্ত্র হইতে মনুষ্য জীবনের চলার পথ ঠিক করা যায় না, সেই কারণেই উপযুক্ত গুরুর মুখে শাস্ত্রের ব্যাখ্যা শুনিতে হইবে। “আচার্য্যবান্ পরুষো বেদ” এই কথাই উপরোক্ত সূত্রটির মর্মার্থ। গুরু হইতে মুমুক্ষুর ভিতর জাগে। শক্তি জাগে এই অর্থে মুমুক্ষুর সাধনস্পৃহা বলবতী হইয়া সাধনে রত হওয়ার প্রসঙ্গই আসিয়া পড়িবে।