কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
কারণ, ধর্মানুশীলন সহজ বা শুধু পছন্দের ব্যাপার নয়। বহু সোপান অতিক্রম করে, তবে একজন সংসারী মানুষ প্রকৃত, ঐকান্তিক, ধর্মালাভে সমর্থ হয়। অনেকেই এই সোপানগুলির অস্তিত্ব সম্বন্ধে অবহিত নন, অথবা হলেও কোন গুরুত্ব দেন না। অনধিকারী এবং অযোগ্য হয়েও তাঁরা আধ্যাত্মিক ফললাভে আগ্রহী। এর পরিণতি—বিভ্রান্তি ও গভীর হতাশা।
মানবসমাজের বেশিরভাগ ঐকান্তিকভাবে ধর্মজীবন গ্রহণের জন্য উপযুক্ত নন। দেহাভিমান, সংস্কার, অনিত্যবস্তুর প্রতি আসক্তি তাঁদের মধ্যে অতিমাত্রায় বর্তমান। অনন্তের ক্ষীণ আভাসও তাঁদের মধ্যে অতিমাত্রায় বর্তমান। অনন্তের ক্ষীণ আভাসও তাঁদের পক্ষে সুদুরপরাহত। তাঁরা চান দেহসুখ, প্রতিপত্তি, জাগতিক ঐশ্বর্য, ইন্দ্রিয়সুখ ও দীর্ঘ জীবন। বৈরাগ্য ও মৃত্যুকে তাঁরা ভয় করেন। বেশির ভাগ সংসারাবদ্ধ মানুষ মুক্তির প্রয়াস না করে এভাবে জীবন কাটিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ধর্ম তাঁদের নিকট গতানুগতিক ব্যাপারমাত্র। তাঁদের যদি কোন নির্জন দ্বীপে, সংসার নির্বাহের উপকরণসহ ছেড়ে দেওয়া হত, তাহলে তাঁরা ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। ধর্ম যেখানে সর্বজনস্বীকৃত প্রতিষ্ঠান এবং প্রত্যেকে আপাতধর্মীর চিন্তা ও কর্মে অভ্যস্ত—এমন সমাজে বাস করে, ধর্মবিষয়ে ঔৎসুক্য তাঁদের দেখাতেই হয়। কিন্তু এ বিষয়ে তাঁদের কোন ধারণাই নেই।
অবশ্য এটা, এমন কি একজন সংসারী মানুষেরও পূর্ণাঙ্গ পরিচয় নয়। তার একটি উজ্জ্বলতর চিত্রও রয়েছে, যা, আশা ও মানবচিত্রের গৌরব উন্মোচনে সহায়তা করে। শুধু নিজেকে নিয়ে মানুষ বাঁচতে পারে না। এমন কি অতি সাধারণ সংসারাবদ্ধ মানুষও শুধু নিজেকে ভালবেসেই সন্তুষ্ট থাকতে পারে না। আত্মীয়স্বজন হলেও, সে অন্যকে ভালবাসে। নৈতিক সচেতনা তার রয়েছে। জ্ঞানতৃষ্ণা তার অপরিসীম, সত্য তাকে প্রলুব্ধ করেছে। সৌন্দর্যবোধ তার আছে। বেশির ভাগ মানুষে এটি সুপ্ত থাকলেও অলুপ্ত। ইহাই সত্যোপ- লব্ধি ও পূর্ণত্বের পথে মানুষকে ঊর্ধ্বগামী করে। নীতিবোধ, সৌন্দর্যবোধ, ভালবাসা, জ্ঞানতৃষ্ণা, সত্যস্পৃহা ও কর্মশীলতা মনুষ্যজীবনকে রক্ষাপূর্বক মহত্ত্বে প্রতিষ্ঠিত করে। ধর্মের স্ফুরণ হয়। পূর্বোক্ত বিষয়গুলির অপসারণ এবং পরবর্তী বিষয়গুলির পূর্ণবিকাশেই ধর্মের সর্বোচ্চ উন্নতি ঘটে।
প্রাথমিক পর্যায়ে যখন পশুবৃত্তি প্রবল, তখন মানুষের পক্ষে ধর্ম—কতকগুলি পবিত্রবিশ্বাসে আস্থা স্থাপন, কতকগুলি আচার অনুষ্ঠান পালনে সীমাবদ্ধ থাকে। ধর্ম তাঁর কাছে সত্য ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠেনি। অবশ্য আন্তরিক আচার পালন ও নিজ বিশ্বাসে টিকে থাকা তাঁর পক্ষে অত্যাবশ্যক যা আধ্যাত্মিক ক্রমবিকাশের উপর বিরাট প্রভাব সৃষ্টি করে। নৈমিত্তিক উৎসব ও সৌন্দর্যোপভোগের মাধ্যমে ধর্ম বেশিরভাগ মানুষকে মুগ্ধ করে।