কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির সূচনা। ব্যবসায়ীদের উন্নতির আশা রয়েছে। বিদ্যার্থীদের সাফল্যযোগ আছে। আত্মীয়দের সঙ্গে মনোমালিন্য দেখা দেবে। ... বিশদ
তবে ভারতের বেদান্ত-প্রচার পাশ্চাত্যে এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। বরং বলা যেতে পারে, স্বামীজীর মধ্য দিয়ে যে কর্মপ্রবাহের সূত্রপাত হয়েছিল, তা অভেদানন্দজীর মাধ্যমে পঁচিশ বৎসর ধরে প্রবাহিত হয়ে পরিপূর্ণ রূপরেখায় পরিণত হয়েছিল এবং বর্তমানে সেই কর্মসাফল্যেরই পরিণতিস্বরূপ শ্রীরামকৃষ্ণ-ভাবপ্রচার-সমিতির মধ্য দিয়ে কার্যধারা অব্যাহত রয়েছে। একথার প্রত্যক্ষ প্রতিবেদক ও রামকৃষ্ণ-ভাবান্দোলনের অন্যতম প্রধান প্রবীণ প্রচারক-ধারক-বাহক স্বামী গহনানন্দজী মহারাজ তাঁর সম্প্রতি পাশ্চাত্য অভিযানের অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন: “শ্রীরামকৃষ্ণের সাক্ষাৎ শিষ্যদের মধ্যে প্রথমে স্বামী বিবেকানন্দ, পরে অল্পকালের জন্য স্বামী সারদানন্দজী, স্বামী তুরীয়ানন্দ, স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ ও সুদীর্ঘকাল ধরে স্বামী অভেদানন্দ পাশ্চাত্যে বেদান্ত-প্রচারের ধারা প্রবর্তন করেছিলেন, এবং বিভিন্ন সময়ে তাঁদের সহকারীরূপে স্বামী নির্মলানন্দ, স্বামী বোধানন্দ ও স্বামী পরমানন্দ প্রমুখ ছিলেন, এবং পরম্পরাক্রমে আমাদের সন্ন্যাসীরা প্রায় সেই ধারাই অনুসরণ করে চলেছেন।...”
স্বামী অভেদানন্দজী শুধু প্রচারক ছিলেন না; পরন্তু অধ্যাত্মজগতের একচ্ছত্রপতি রাজা ছিলেন। তাঁর জীবনের সিংহভাগ সময় বেদান্ত-প্রচার কার্যে অতিবাহিত হয় বলেই ত্যাগ-তপস্যার কথা কুসুমাস্তীর্ণ হয়ে পড়ে। তিনি যখনই সময় ও সুযোগ পেয়েছেন তখনই তপস্যায় বেরিয়ে পড়েছেন। তাঁর আধ্যাত্মিকতা সম্বন্ধে রামকৃষ্ণ সাম্রাজ্যের রাজা তথা Spiritual Hero স্বামী ব্রহ্মানন্দজী মহারাজ বলেছেন: “কালী যখন তার বাইরের কাজ কমিয়ে দেবে, তখনই তার আধ্যাত্মিক-শক্তির বিকাশ লোকে বুঝতে পারবে।” —একথা পরবর্তীকালে তাঁর বক্তৃতাবলীর মধ্যে বেশ আভাষ পাওয়া যায়। তবে তাঁর বিশাল কর্মপ্রবাহের জন্য তিনি প্রচারক হিসাবেই প্রতিষ্ঠিত।
শ্রীরামকৃষ্ণ-পার্ষদের মধ্যে স্বহস্তে রামকৃষ্ণ সাহিত্য রচনায় স্বামী সারদানন্দজী যেমনি অসাধারণ, ঠিক তেমনি স্বহস্তে বেদান্ত-সাহিত্য রচনায় স্বামী অভেদানন্দজীও অনন্যসাধারণ ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। অবশ্য স্বামী বিবেকানন্দের বক্তৃতাবলীর মধ্যেও অনেক বেদান্ত-সাহিত্যের পরিচয় পাওয়া যায়। স্বামীজীর মতো অভেদানন্দজীর মধ্যেও বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন এক ব্যক্তিত্বশালী আচার্যের আলোক পরিলক্ষিত হয়; এবং সে আলোকে পাশ্চাত্যের বড় বড় বিদ্বান্ ও মহান ব্যক্তিত্বরা হয়েছে প্রভাবান্বিত। দার্শনিক, বিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী, চিত্রকর, সাহিত্যিক, কবি থেকে আরম্ভ করে সকল শ্রেণীর মানুষ তাঁর বক্তৃতায় হয়েছে মন্ত্রমুগ্ধ। সুতরাং তাঁর এ বেদান্ত প্রচার সর্বার্থে সার্থক। তবে এই প্রচারকার্য-সম্বন্ধে তিনি এক জবানবন্দিতে ব্যক্ত করেছেন এভাবে: “স্বামীজী আমাকে ১৮৯৬ খ্রীষ্টাব্দে তাঁহার কার্যে সাহায্য করিবার জন্য ভারত হইতে লইয়া যান। সেখানকার কাজের ভার আমার উপর ন্যস্ত করিয়া তিনি মাতৃভূমি ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হন। ২৫ বৎসর পূর্বে আমি ইংলণ্ডে অবতরণ করি। ২৫ বৎসর কম সময় নয়, এক শতাব্দীর এক-চতুর্থাংশ। অল্পলোকই এই সময়ের দীর্ঘতার কথা ভাল করিয়া বুঝিতে পারেন।