গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
“অতি শীতল মলয়ানিল মন্দ মন্দ বহনা,/ হরি বিমুখ হামারি অঙ্গ মদনানলে দহনা।।”
—মূর্চ্ছা প্রাণসখীকে আবার ডাকিয়া আন, একমাত্র অই এখন আমার শ্রেষ্ঠ আশ্রয়।
বিরহে শ্রীরাধার প্রাণ কণ্ঠাগত দেখিয়া লীলাশক্তি যোগমায়া তীব্র বেদনার মহাসমুদ্রে মানের এক নব তরঙ্গ তুলিয়া বিরহিণীর প্রাণরক্ষার ব্যবস্থা করিলেন। দুর্ব্বিষহ বিরহাগ্নির মধ্যে মান। এ কিন্তু এক বিচিত্র কথা। তবু মাদনাখ্য মহাভাবসায়রে কিছুই অসম্ভব নয়। অনন্তভাবের অভিনব বিকাশে মহাভাব সিন্ধু নিত্য তরঙ্গায়িত।
শ্রীরাধা ভাবনেত্রে দেখিলেন—শ্রীকৃষ্ণ কোণ মথুরাবাসিনী প্রিয়জনার সঙ্গে আনন্দ করিতেছেন। তারপর তাহাকে ছাড়িয়া শ্রীরাধার কাছে আসিয়াছেন। তাঁহাকে দেখিয়াই বিরহিণী মানিনী হইয়াছেন। অনেক চেষ্টা করিয়া মানভজন করিতে না পারিয়া তিনি চলিয়া গিয়াছেন। তারপর এক কালো ভ্রমরকে দূত করিয়া তাঁহার নিকট পাঠাইয়াছেন—মান-প্রসাদনের জন্য। ভ্রমর আসিয়া শ্রীরাধার শ্রীচরণের পার্শ্বে গুঞ্জন করিতেছে।
এই সমস্ত ব্যাপারটা শ্রীরাধার স্ফূর্ত্তি। বিরহের তীব্রতায় স্ফূর্ত্তিকে সাক্ষাৎকার মনে হইতেছে। ভাবিতেছেন—
“আয়াতি চ মম নিকটং/যাতি চ নিহ্নুত্য মাথুরং নগরম্।”
প্রাণবল্লভ অন্যের অলক্ষিতে আমার কাছে আসে, আবার গুপ্তভাবে চলিয়া যায়। সুতরাং “কাশ্চন রামা রময়তি রমণঃ স তত্রাপি।” সুতরাং মথুরা নগরেও তাঁর অনেকে প্রিয়তমা আছে—নতুবা গুপ্তভাবে আসিয়া আবার চলিয়া যান কেন? ভাবিতে ভাবিতে সেই মথুরাবাসিনীকে যেন দেখিতেছেন। তার সঙ্গে শ্যামের মিলন দেখিতেছেন—“ধ্যায়ন্তী কৃষ্ণসঙ্গমম্।” দেখিতেই মানের উদয়। মহাবিরহের দুঃখের সমুদ্রের মধ্যে মানের যেন একটি ক্ষুদ্র দ্বীপের উদয় হইল।
ডঃ মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর ‘উদ্ধব-সন্দেশ’ থেকে