মাঝে মধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযো ... বিশদ
“প্রশস্ত গার্হস্থ্য ধর্ম জীবে শিক্ষা দিতে।
অবতীর্ণ হরিচাঁদ আসি অবনীতে।।”
জীবের দুঃখে কাতর হয়ে শ্রী হরিচাঁদ দরিদ্র ও নিপীড়িত জাতির মধ্যে জন্মগ্রহণ করেন। ধর্মার্জন করতে হলেই যে গৃহত্যাগ করে বনবাসী কিংবা আশ্রমবাসী হতে হবে মানুষের মনের সেই বহুযুগের অন্ধ ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করেন তিনি। তিনি বলেন, শুধু সংসার ত্যাগ করলেই যে ধর্মার্জন করা যায় তা নয়, সংসারে বাস করেও ধর্মার্জন করা যায়। তাঁর কথায়—
“গৃহ ধর্ম্ম রক্ষা করে বাক্য সত্য কয়।
বানপ্রস্থী পরমহংস তার তুল্য নয়।।”
গৃহী যদি সৎ সত্যবাদী ও চরিত্রবান হয়ে সংসার ধর্ম পালন করে তবে তিনিই প্রকৃত সাধু। সেই গৃহীর জপ ধ্যানের প্রয়োজন নাই। যিনি খোলামনে হাতে কাজ করেন আর মুখে ঈশ্বরের নাম করেন তার পবিত্র অন্তরেই জগৎপতি শ্রী হরি বিরাজ করেন এবং সেই গৃহী সাধু বলে গণ্য হন।
হরিচাঁদ জীবদেহ ধারণ করে জীবোচিত কর্মই করেছেন। গৃহস্থের মূলভিত্তি অর্থ, সেই অর্থ উপার্জনের সুগম পন্থা দেখাতে তিনি নিজে ব্যবসা করে শিখিয়েছেন কিভাবে সৎ উপায়ে ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করা যায়। পুরাকালে হতে মুনি ঋষি ও আর্যগণ কৃষিকার্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন। হরিচাঁদ নিজে চাষ করে মানুষকে শেখালেন, জমি লক্ষ্মী তাকে যত্ন করে চাষ করলে সুফল সে দেবেই।
তিনি বাল্যকালে চঞ্চল আর কৌতুকপ্রিয় ছিলেন। তাঁর বাল্যকালে বাড়ীতে সর্বদা বৈরাগীদের আগমন হত। সাধু যশোবন্ত বৈরাগীদের দোষগুণ বিচার না করে অতিথি নারায়ণ জ্ঞানে তাঁদের সেবা করতেন। হরিদাস বৈরাগীদের স্নান ভোজনের অবসরে তাদের ঝুলি উজার করে ঢেলে ফেলে অন্তরালে থেকে ঝুলির তুচ্ছ দ্রব্যাদির জন্য বৈরাগীদের হাহাকার দেখে কৌতুক অনুভব করেন।
সদা হাস্যময় হরিচাঁদ গোচারণ মাঠে রাখাল সখাগণের সঙ্গে খেলাচ্ছলে বৃক্ষ শাখায় লুকিয়ে থেকে সখাগণের চিন্তিত ভাব দেখে মজা পান। লুকোন স্থানে হতে বাইরে এসে সখাদের চিন্তিত ভাবভঙ্গি নকল করে বালক স্বভাবে হেসে কুটি কুটি হন। আবার বালক হরিদাস রত্নডাঙ্গা বিলের কূলে দূর্ব্বাসনে বসে প্রকৃতির অপূর্ব শোভাদর্শন করে গভীর চিন্তামগ্ন ভাবে উদাস দৃষ্টিপাতে চুপ করে বসে থাকেন। চপল বালকের এই যে মুহূর্তে ভাবান্তর—জানি না এ কেমন করে সম্ভব।
এই বালক হরিদাসই কলেরায় মৃতপ্রায় বিশ্বনাথের জীবন সংশয় শুনে ইস্পাত কঠিন কণ্ঠে বলেন, কলেরায় বিশ্বনাথের কি হবে, নিদানের কর্তা তো আমি। তোরা আমার সঙ্গে চল, দেখে আসি বিশ্বনাথের কি হয়েছে। তারপর যখন মৃতপ্রায় বিশ্বনাথের হাত ধরে আকর্ষণ করে ডাক দিলেন, বিশ্বনাথ উঠে আয়, আমাদের খেলার সময় যে বয়ে যাচ্ছে। অমনি নিদ্রোত্থিতের ন্যায় চক্ষু মুছে বিশ্বনাথ হরিদাসের হাত ধরে চলে যান গোচারণে। সেকি খেলতে যাওয়ার ডাক নাকি বিশ্বনিয়ন্তার অমোঘ আদেশ। যে আদেশের অন্যথা করা শিবেরও অসাধ্য। তাইতো অনন্ত যাত্রার যাত্রীও তাঁর যাত্রা স্থগিত রেখে অবলীলায় খেলতে যায়।
ক্রমে বিবাহ করে হরিদাস সংসার ধর্মে প্রবেশ করেন। সেই যুগের সমাজ ব্যবস্থায় খুব অল্প বয়সেই ছেলে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রথা ছিল। সেই অনুযায়ী অতি অল্পবয়সেই হরি-শান্তির শুভ বিয়ে সুসম্পন্ন হয় ও আমভিটা বাসকালে তাঁর তিন কন্যা ও দুই পুত্র জন্মগ্রহণ করে।
শ্রীমতী মীরা হালদার ‘শ্রী শ্রী হরিলীলা কথামৃত’ থেকে