রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
আমরা এই দুই দিক্ হইতে কথাটার একটু আলোচনা করিব। সর্বদেশে ও সর্বকালেই প্রাজ্ঞগণ এই তত্ত্বটি স্বীকার করিয়াছেন। শকুন্তলার সেই—
রম্যাণি বীক্ষ্য মধুরাংশ্চ নিশম্য শব্দান্
পর্যুৎসুকীভবতি যৎ সুখিতোহপি জন্তুঃ।
তচ্চেতসা স্মরতি নূনমবোধপূর্বং
ভাবাস্থিরাণি জননান্তরসৌহৃদানি।।
এই শ্লোকে কালিদাস এই তত্ত্বেরই ইঙ্গিত করিয়াছেন। রূপ, রস, গন্ধ প্রভৃতির রমণীয়তা বলিলে সৌন্দর্যই বুঝায়। কালিদাস বলেন, এই সৌন্দর্যদর্শনে চিত্তে ভালবাসার বা “সৌহৃদের” স্মৃতি জাগিয়া উঠে—যদিও সে স্মৃতি অস্পষ্ট হউক, যদিও উহা অবুদ্ধিপূর্বক হউক এবং যদিও সে ভালবাসা “ভাবস্থির” হউক, তথাপি উহা ভালবাসারই স্মৃতি বটে। কিন্তু যাহার অনুভব হয় নাই, তাহার ত স্মরণ হয় না, সুতরাং মানিতে হইবে আমরা সৌন্দর্যকেই ভালবাসিয়াছিলাম। নতুবা সৌন্দর্যদৃষ্টে ভালবাসার স্মৃতি জাগিত না।
সৌন্দর্য ও সুন্দর, প্রেম ও প্রেমিক, একই। ধর্ম ও ধর্মীতে স্বরূপগত কোন ভেদ নাই। যে জ্ঞাতা সেই জ্ঞান, যে আনন্দময় সেই আনন্দ, যে চেতন সে-ই চৈতন্য—আবার বিষয়ও সে-ই। কিন্তু তবু জ্ঞানাংশে বহুত্বের আরোপ হয়, জ্ঞাতা একই থাকে। উপাধিভেদে সৌন্দর্য অনন্ত হইলেও সুন্দর একই বটে, তেমনই উপাধিভেদে প্রেম অনন্ত হইলেও প্রেমিক একই, তাহা সত্য।
প্রেমিক যেন “আমি”, আর সুন্দর যেন “তুমি”। জগতের যত সৌন্দর্য্য সবই যখন এক সৌন্দর্য, তখন একমাত্র অদ্বিতীয় সুন্দর তুমি। সব প্রেমই যখন মূলে এক প্রেম, তখন একমাত্র অদ্বিতীয় প্রেমিক আমি। তোমার অনন্ত সৌন্দর্য, আমার অনন্ত প্রেম—প্রকারে অনন্ত, কালে অনন্ত, দেশে অনন্ত, বৈচিত্র্যে অনন্ত—ইহাতেই তোমাতেই আমাতে নিত্যলীলা। অবশ্য এ লীলার স্ফূর্তি তখন সম্ভবপর যখন তুমি ও আমি স্বরূপে সজাগ থাকি।
সুতরাং লীলা অনন্ত, ধাম অনন্ত, আস্বাদন অনন্ত। এইজন্যই পূর্ণ সৌন্দর্য চিরপুরাতন হইয়াও প্রতিক্ষণে রসিকের নিকট ‘নিত্য নূতন’ রূপে প্রতিভাত হয়। ‘জনম অবধি হম রূপ নেহারনু নয়ন ন তিরপিত ভেল’—দেখিয়া দেখিবার আকাঙ্ক্ষা কখনই নিবৃত্ত হয় না।
গোপীনাথ কবিরাজের ‘সাহিত্য চিন্তা’ থেকে