কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
শুকাইয়া গেল, কারণ আছে। “নিশার স্বপন-সুখে সুখী যেই, জাগে সে কাঁদিতে।” জীব এতদিন যে-সুখে আত্মবিস্মৃত হইয়া প্রকৃতির নন্দনসুষমা উপভোগ করিয়াছিল, সেটা অস্থায়ী মায়িক সুখ, স্বপ্নের খেলা মাত্র। জাগরণের সঙ্গে তাই তাহা কোথায় অদৃশ্য হইয়া গিয়াছে, সে খেলাঘর অদৃষ্ট চক্রে কোথায় নিষ্পেষিত হইয়া গিয়াছে। মানুষ ভালবাসিতে চায়, কিন্তু ঠিক ভালবাসিতে পারে না, জানেও না। তাই তাহার ভাগ্যে দুঃখ ভিন্ন আনন্দ কোথাও জোটে না। ঐ ভালবাসা যে বস্তু তাহা মায়ার রাজ্যে থাকিয়া যথার্থ ভাবে অনুভব করা যায় না। সেইজন্য মায়ান্ধ মনুষ্য পূর্ণরূপ দর্শন করিতে পারে না। যেদিন পারিবে মায়ার অবগুণ্ঠন তাহার নয়ন হইতে ঘুচিয়া যাইবে। সে যোগমায়ার আশ্রয় গ্রহণ করিয়া পরমামৃতের মধুর আস্বাদ প্রাপ্ত হইবে।
ভালবাসাই আত্মজ্ঞান, আত্মদর্পণ না হইলে যেমন নিজের রূপ নিজে দেখিতে পাওয়া যায় না, সেইরূপ আধার না পাইলে ভালবাসাও চিরতার্থ হয় না। মানুষ নিজেকেই নিজে ভালবাসে বটে, কিন্তু যতক্ষণ নিজের স্বরূপ আর একজন মানুষের স্বচ্ছ হৃদয়-দর্পণে প্রতিবিম্বিত না দেখিতে পায় ততক্ষণ নিজেকে চিনিতেও পারে না, ভালবাসিতেও পারে না। তাই দর্পণ চাই, “দুই” না হইলে ভালবাসার সম্ভাবনা কোথায়? ‘পর’ ব্যতীত আত্মপ্রেম নিস্ফল। প্রকৃতিও দর্পণ বটে, কিন্তু এ দর্পণে মানুষ নিজেকে সম্পূর্ণভাবে দেখিতে পায় না। চিন্ময় না হইলে চিন্ময়কে ধারণ করিবে কে? তাই—“মানুষ মন চাহে মানুষেরি মন।” মায়া-রাজ্যে ঘুরিতে ঘুরিতে কাহারও এরূপ মনের মিলন ঘটিয়া যায়; তখন উভয় মনে সমসূত্র-পাত হইয়া আত্মবিস্মৃত ঘটে, “প্রাণময়ে প্রাণ লীন” হইয়া যায়। একটা নেশার মন প্রাণ তখন বিভোর থাকে, নীল আকাশ, শ্যামল ধরণী, প্রকৃতির সকল বস্তুই তখন জীবের ভাবনেত্রের সম্মুখে অনির্বচনীয় সৌন্দর্যে মণ্ডিত হইয়া উঠে।
কিন্তু এ ভাব দীর্ঘকালস্থায়ী হয় না। যাহাকে অবলম্বন করিয়া এ রসের উদ্ভব হয়, যখন কালনেমির অবশ্যম্ভাবী আবর্তনে তাহা নয়নের অন্তরাল হইয়া যায়—তখন হৃদয় নীরস এবং যন্ত্রণায় প্রপীড়িত হইয়া উঠে। জীবের ‘সাজান বাগান’ এইভাবেই শুকাইয়া যায়। অতীতের বেদনাময়ী স্মৃতি বক্ষে পোষণ করিয়া জীব নৈরাশ্যের অতল সমুদ্রে ডুবিয়া যাইতে চায়।