বেশি বন্ধু-বান্ধব রাখা ঠিক হবে না। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য আসবে। বিবাহযোগ আছে। কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন হতে ... বিশদ
আধ্যাত্মিক জীবন আরম্ভ করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন বিচার—সদসৎ বিচার। যতই এই বিচারশক্তি বাড়বে ততই ক্ষণস্থায়ী জাগতিক বস্তু থেকে তৃষ্ণা দূর হবে এবং অনন্ত চিরস্থায়ী দৈবসম্পদের প্রতি মন যাবে। দার্শনিক স্পিনোজা আধ্যাত্মিক বিচারকে এ ব্যাখ্যা করেছেন:
“নিজেদের কার্যাবলী বিচার করে মানুষ যেসব বস্তুকে সবচেয়ে ভাল বলে মনে করে তা হচ্ছে—অর্থ, যশ বা ইন্দ্রিয়সুখ। এর মধ্যে শেষটির পরিণাম ঘটে তৃপ্তিতে ও অনুতাপে; অপর দুটি কখনও তৃপ্ত হয় না। আমরা যত পাই ততই তৃষ্ণা বেড়ে যায়। যশোলিপ্সা অপরের মতামত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে আমাদের বাধ্য করে। যদি কোন বস্তুর প্রতি আকর্ষণ না থাকে তবে তা নিয়ে কোন ঝগড়া হবে না, তা ধ্বংস হলে দুঃখ হবে না, কারো থাকলে ঈর্ষাও হবে না—এককথায় মনে কোন চাঞ্চল্য উঠবে না। নশ্বর বস্তুর প্রতি আসক্তিবশতঃ মনের দোষগুলি জাত হয়। কিন্তু অনন্ত, চিরস্থায়ী বস্তুর প্রতি আকর্ষণ মনে আনন্দ আনে আর এ আনন্দ দুঃখহীন। সুতরাং সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের এই আনন্দকে কামনা করতে হবে এবং খুঁজতে হবে।”
উপনিষদের ভাষায় মানবজীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, “জীবনের চির-চঞ্চল ভোগনিচয়ের মধ্যে শাশ্বত সুখ লাভ করা।” এই শাশ্বত সুখ হচ্ছে ভগবৎ-আনন্দ। ভগবৎ-চেতনায় মগ্ন হওয়া হচ্ছে তাঁর রাজ্যে প্রবেশ।
জীবনের উদ্দেশ্য ঈশ্বরলাভ এবং জাগতিক ভোগসুখ ক্ষণস্থায়ী—এ বৌদ্ধিক ধারণা অনেকের আছে। আমাদের হৃদয় কিন্তু এতে সাড়া দেয় না কারণ ভোগ্যবিষয় সুখ খোঁজা আমাদের অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। এখন ভগবৎ-আনন্দ খুঁজবার জন্য আমাদের নূতন অভ্যাস সৃষ্টি করতে হবে। ব্রাদার লরেন্স বলেছেন: “ভগবানকে জানবার জন্য আমাদের ঘন ঘন চিন্তা করতে হবে; আর যেই তাঁর প্রতি ভালবাসা আসবে তখন আমাদের মন ক্রমাগত তাঁর কথাই ভাববে। হৃদয় আপ্লুত হবে ভগবত-সম্পদে।”
অপরপক্ষে যেই আমরা স্থির করলাম যে আমরা দৈবসম্পদ চাই এবং জাগতিক সম্পদ চাই না, তখনই আমাদের ভগবানে মন নিবদ্ধ করতে শিখতে হবে। আমাদের জীবনে দুর্বলতা ফুটে উঠুক, বিস্মৃতি আসুক—কিছুই এসে যায় না; শেষে আমরা লক্ষ্যে পৌঁছুব যদি আমাদের অধ্যাত্ম সংগ্রামে অব্যাহত থাকে। শিশু যখন হাঁটতে শেখে, সে ক্রমাগত পড়তে থাকে। সে যে কোনদিন হাঁটতে পারবে— সেটা অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়। কিন্তু সে নিজেকে বার বার ঠেলে তোলে, কারণ তার ভেতরে রয়েছে নিজের পায়ে দাঁড়ানর তীব্র ইচ্ছা। আর শেষে সে না টলে সোজা হেঁটে চলে। ঠিক তেমনি অধ্যাত্ম জীবনে আমরা যদি সংগ্রাম চালিয়ে যাই তবে নিষ্ফলতা আসবে না। ভগবানই আমাদের যথাসর্বস্ব—এ দৃঢ়বিশ্বাস যদি আমাদের মনে থাকে তবে কখনই আমরা হাল ছেড়ে দেব না। চোখ শরীরের আলোকবর্তিকা। যদি তোমার দৃষ্টি একাগ্র ও স্বচ্ছ হয় তবে তোমার সারা শরীর দীপ্তিমান হয়ে উঠবে।