বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
এই ঘন আবরণ উঠে গেল
অবিচ্ছেদে দেখা দিবে
দেশহীন কালহীন আদি জ্যোতি—
শাশ্বত প্রকাশ পারাবার
সূর্য যেথা করে সন্ধ্যাস্নান
অসংখ্য নক্ষত্র যেথা মহাকায় বুদবুদের মতো
উঠিতেছে ফুটিতেছে।
কারণ শুধু এই মহাকবিই নন, প্রত্যেক জীবই উপলব্ধি করে— ‘সেথায় নিশান্ত যাত্রী আমি, চৈতন্যসাগর-তীর্থপথে’।
সুষুপ্তিতে যে ‘অতিঘ্নীম আনন্দস্য’ আনন্দের পরাকাষ্ঠা, তার কারণ এই স্বরূপ-চেতনার সান্নিধ্য। অজ্ঞানে বা মোহের আবরণের মধ্য দিয়েও তার যে ‘একটুকু ছোঁওয়া লাগে’, তাই আমাদের জুড়িয়ে দিয়ে যায় স্বরূপানন্দের বিমল পরশে। উপনিষদ তার বারবার আত্মতত্ত্বজিজ্ঞাসুকে নিয়ে যাচ্ছেন সুপ্ত পুরুষের কাছে। তার নাম ধরে অনেক ডাকাডাকি করছেন, কোনো সাড়াশব্দ নেই। শেষে গা ধরে ঝাঁকুনি দিতে ধড়মড়করে যে উঠে বসল। গুরু বা আচার্য তখন শিষ্যকে বললেন: ‘ক্ব ত্রষ তথা অভূৎ? কুত এতদ্ আগাৎ?’ তখন এ কোথায় ছিল, যখন একে শত ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না, এখনই বা এ কোথা থেকে এল? করো এরই অন্বেষণ, তবেই মিলবে চেতনার মূল স্বরূপের সন্ধান। চেতনার এই আরোহ-অবরোহ, দেহের স্তরে নেমে আসা আবার দেহ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে উঠে যাওয়া, এই প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক ঘটনাটির উপর সতর্ক দৃষ্টি দাও, সজাগ হয়ে দেখো। এই স্বপ্নান্ত ও বুদ্ধান্ত, এই একবার জাগরণের কূলে আবার সুষুপ্তির কূলে কোন মহামৎস্যের অনুসঞ্চরণ চলছে, কে এপার-ওপার সাঁতার দিয়ে চলেছে আবিরাম, তারই অনুসন্ধানে তৎপর হতে নির্দেশ দিয়েছেন যাজ্ঞবল্ক্য প্রমুখ ঔপনিষদ ঋষিবৃন্দ। আরও একটা প্রাকৃতিক ঘটনাকে তুলে ধরেছেন উপনিষদ এই প্রসঙ্গে। মৃত্যু একটি অবধারিত, সুনিশ্চিত পরিণাম জীবনের। কিন্তু কখনো লক্ষ্য করেছ কি মৃত্যুপথযাত্রী মুমূর্ষু ব্যক্তির চেতনার আলো কেমন ক্রমে ক্রমে গুটিয়ে আসে?
গোবিন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়ের ‘চেতনার আরোহিণী’ থেকে