বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
ভারতে যে-কোন সংস্কার বা উন্নতির চেষ্টা করা ইউক, প্রথমতঃ ধর্মের উন্নতি আবশ্যক। ভারতকে সামাজিক বা রাজনীতিক ভাবে প্লাবিত করার আগে প্রথমে আধ্যাত্মিকভাবে প্লাবিত কর।
ভাবগতিক দেখে বোধ হয় যে, সোশ্যালিজম্ বা অন্য কোনরূপ গণতন্ত্র, তার নাম যাই দিন না কেন, শীঘ্র প্রচলিত হবে। লোকে অবশ্য তাদের সাংসারিক প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি আকাঙ্ক্ষা মেটাতে চাইবে। তারা চাইবে—যাতে তাদের কাজ পূর্বাপেক্ষা কমে যায়, যাতে তারা ভাল খেতে পায় এবং অত্যাচার ও যুদ্ধবিগ্রহ একেবারে বন্ধ হয়। কিন্তু যদি এদেশের সভ্যতা বা অন্য কোন সভ্যতা ধর্মের উপর, মানবের সাধুতা উপর প্রতিষ্ঠিত না হয়, তবে তা যে টিকবে তার নিশ্চয়তা কি? এটি নিশ্চয় জানবেন যে, ধর্ম সকল বিষয়ের মূলদেশ পর্যন্ত গিয়ে থাকে। যদি ঐটি ঠিক থাকে তবে সব ঠিক।
...উচ্চবর্ণকে নিম্ন করিয়া, আহার-বিহারে যথেচ্ছাচার অবলম্বন করিয়া, কিঞ্চিৎ ভোগ-সুখের জন্য স্ব স্ব বর্ণাশ্রমের মর্যাদা লঙ্ঘন করিয়া জাতিভেদ-সমস্যার মীমাংসা হইবে না; পরন্তু আমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই যদি বৈদান্তিক ধর্মের নির্দেশ পালন করে, প্রত্যেকেই যদি ধার্মিক হইবার চেষ্টা করে, প্রত্যেকেই যদি আদর্শ ব্রাহ্মণ হয়, তবেই এই জাতিভেদ-সমস্যার সমাধান হইবে। তোমরা আর্য, অনার্য, ঋষি, ব্রাহ্মণ অথবা অতি নীচ অন্ত্যজ জাতি—যাহাই হও, ভারতবাসী সকলেরই প্রতি তোমাদের পূর্বপুরুষগণের এক মহান আদর্শ রহিয়াছে। তোমাদের সকলের প্রতিই এই এক আদেশ, সে আদেশ এই: ‘চুপ করিয়া বসিয়া থাকিলে চলিবে না, ক্রমাগত উন্নতির চেষ্টা করিতে হইবে। উচ্চতম জাতি হইতে নিম্নতম পারিয়া (চণ্ডাল) পর্যন্ত সকলকেই আদর্শ ব্রাহ্মণ হইবার চেষ্টা করিতে হইবে।’... আমাদের জাতিভেদের ইহাই লক্ষ্য। ইহার উদ্দেশ্য—ধীরে ধীরে সমগ্র মানবজাতি যাহাতে আদর্শ ধার্মিক হয়—অর্থাৎ ক্ষমা, ধৃতি, শৌচ, শান্তিতে পূর্ণ হয়, উপাসনা ও ধ্যানপরায়ণ হয়। এই আদর্শ অবলম্বন করিলেই মানব-জাতি ক্রমশঃ ঈশ্বর লাভ করিতে পারে।
তোমরা কি শোন নাই যে, শাস্ত্রে লিখিত আছে—ব্রাহ্মণের পক্ষে কোন বিধি-নিষেধ নাই, তিনি রাজার শাসনাধীন নহেন, তাঁহার মৃত্যুদণ্ড নাই? একথা সম্পূর্ণ সত্য। স্বার্থপর অজ্ঞ ব্যক্তিগণ যেভাবে ব্যাখ্যা করিয়াছে, অবশ্য সেভাবে বুঝিও না; প্রকৃত মৌলিক বৈদান্তিকভাবে ইহা বুঝিবার চেষ্টা কর। যদি ব্রাহ্মণ বলিতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায়, যিনি স্বার্থপরতা একেবারে বিসর্জন দিয়াছেন, যাঁহার জীবন জ্ঞান ও প্রেম লাভ করিতে এবং উহা বিস্তার করিতেই নিযুক্ত—কেবল এইরূপ ব্রাহ্মণ ও সৎস্বভাব ধর্মপরায়ণ নরনারী দ্বারা যে-দেশ অধ্যুষিত, সে-জাতি ও সে-দেশ যে সর্বপ্রকার বিধিনিষেধের অতীত হইবে, ইহাতে আর আশ্চর্য কি! তাঁহাদের শাসনের জন্য আর সৈন্যসামন্ত পুলিস প্রভৃতির কি প্রয়োজন? তাঁহারা সাধুপ্রকৃতি মহাত্মা—তাঁহারা ঈশ্বরের অন্তরঙ্গস্বরূপ। আর আমরা শাস্ত্রে দেখিতে পাই—সত্যযুগের একমাত্র এই ব্রাহ্মণজাতিই ছিলেন।