আয় বৃদ্ধি ও গৃহসুখ বৃদ্ধি। কর্মস্থলে সাফল্য ও প্রশংসা লাভের সম্ভাবনা। শরীর-স্বাস্থ্য বুঝে চলুন। ... বিশদ
এর আগে তাঁর দু’বারের শাসনকালে নরেন্দ্র মোদি বুঝিয়ে দিয়েছেন উন্নয়ন নয়, তিনি বদলিপন্থী। জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধীর গড়া ভারতকে তিনি মোদির ভারতে বদলে দেওয়ার নেশায় মেতে উঠেছেন। তাই রাষ্ট্রপতিভবন থেকে রাজপথ, রেলস্টেশন থেকে স্মৃতিসৌধ, ইতিহাস থেকে সমাজবিজ্ঞান বদলে দেওয়া হচ্ছে নির্বিচারে। ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ঐতিহাসিক গুরুত্বকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এই কাজ হচ্ছে। এই বদলেরই একটি ফসল মেগা সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প। দেশের বহু মানুষ দু’বেলা পেটভরে খেতে না পারলেও ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পেই ব্রিটিশ আমলের কিংসওয়ে, স্বাধীনতার পরে যা হয়েছিল রাজপথ, তাই এখন হয়েছে কর্তব্যপথ। সেই কর্তব্যপথ সামান্য বর্ষণেই হয়ে গিয়েছে জলাশয়! তার বেসমেন্টের পার্কিং এলাকা ছোটখাট পুকুরে পরিণত হয়েছে। এবার দেখা গেল, মেগা প্রকল্পের অন্যতম ভারতের ক্ষমতার ভরকেন্দ্র নতুন সংসদ ভবনের অন্দরেও বৃষ্টির জল ঢুকে পড়েছে! অথচ ঐতিহ্যপূর্ণ পুরনো সংসদ ভবন থাকতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন সংসদ ভবন তৈরির আদৌ কোনও প্রয়োজন ছিল কি না সেই সঙ্গত প্রশ্ন আজ উঠছে। শুধু তাই নয়, অবহেলার বহু নজির ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পুরনো সংসদ ভবনে। শিল্পী নন্দলাল বসুর আঁকা লিনোকাটে প্রিন্ট করা সীমান্ত গান্ধীর অমূল্য চিত্রটিও অবহেলায় আলমারির মাথায় পড়ে রয়েছে। অযত্নে রয়েছে আরও অনেক কিছুই। আর মোদি জমানার এমন একটা সময়ে নতুন এই সংসদ ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল যখন দেশজুড়ে করোনা মারণ রোগের চেহারা নিয়েছে। এই ভাইরাস মোকাবিলায় গোটা দেশ কার্যত দিশাহারা ছিল। অক্সিজেন-মাস্ক-স্যানিটাইজার এবং টিকার মতো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাবে ধুঁকছিল একাধিক রাজ্য। অবস্থা সামাল দিতে কেন্দ্রের ব্যর্থতা তখন ছিল নিত্যদিনের খবর। তবু দেশের মানুষের প্রাণ নয়, বরং নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সংসদ ভবন তৈরি করাই ছিল মোদির অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। এবং নির্লজ্জভাবে আমিত্ব প্রকাশের জন্য সংসদ ভবনের উদ্বোধনে রাষ্ট্রপতিকে পর্যন্ত আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কারণ প্রোটোকল অনুযায়ী তিনি উপস্থিত থাকলে নতুন ভবন উদ্বোধনের সুযোগ হাতছাড়া হতো প্রধানমন্ত্রীর।
শুধু সংসদ ভবনই অবশ্য নতুন নয়। মোদির সাধের আরও এক সৌধ অযোধ্যার রামমন্দিরের রামলালার গর্ভগৃহেও ছাদ চুঁইয়ে জল পড়তে দেখা গিয়েছে। উদ্বোধনের মাত্র পাঁচ মাস পর। তারও আগে দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনের জন্য তৈরি ভারত মণ্ডপম-এর বাইরের চত্বরও বৃষ্টির জলে ভাসতে দেখা গিয়েছে। জল জমেছে প্রগতি ময়দানের সুড়ঙ্গেও। রামমন্দির যাওয়ার নতুন ‘রামপথ’ বৃষ্টিতে ভেঙে গিয়েছে। ভেঙেছে নতুন তৈরি বিমানবন্দরের প্রাচীরও। আসলে এ সবই তড়িঘড়ি কাজের ফল। নিজের মাহাত্ম্য প্রচারে মোদি চেয়েছিলেন, ভোটের আগেই সব প্রকল্পের উদ্বোধন করে ফেলতে। তাতে হয়তো ভোটে ফায়দা মিলবে। তাই রামমন্দির নির্মাণের সম্পূর্ণ কাজ ২০২৫ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মাঝপথেই তার উদ্বোধন করেন তিনি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কেবলমাত্র পরীক্ষার আগে কয়েকদিন পড়লে যেমন ভালো ফল করা যায় না, নির্মাণ কাজেও তেমন কোনও শর্টকাট পদ্ধতি নেই। অথচ উদ্বোধনের চাপ থাকায় সেটাই হয়তো করতে বাধ্য হয়েছেন স্থপতি থেকে প্রমোটাররা। যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি এই জল পড়া বা ভেঙে যাওয়া। মোদির এই ফর্মুলার হাত থেকে রেহাই মেলেনি বিমানবন্দরেরও। বিরোধীরা তাই কটাক্ষ করে বলছেন, ‘লিক’ সরকার।