পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
নির্দেশিকার বিষয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাজ্যগুলির সাফাইয়ের ভাষা এক। পুণ্যার্থীরা যাতে তাঁদের পছন্দমতো খাবারের দোকান নির্বাচন করতে পারেন, খাবারের গুণমান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হন— তাই এই ব্যবস্থা। সাফাই শুনে মনে হতে পারে উদ্দেশ্য মহৎ। কিন্তু এই নির্দেশিকা এতই বালখিল্য যে তা নিয়ে বিশেষ আলোচনার প্রয়োজন হয় না। নির্দেশ জারির কারণ হিসেবে যেসব যুক্তি দেওয়া হয়েছে তাও একেবারে ছেলেভোলানো। তবু বিজেপি শাসিত এই তিন রাজ্য সরকারের দেওয়া নির্দেশিকার কারণ সমূহকে তর্কের খাতিরে যুক্তিগ্রাহ্য মেনে নিলেও প্রশ্ন ওঠে, গোটা দেশে যে লক্ষ লক্ষ খাবারের দোকান রয়েছে তার মালিক, কর্মচারীর নাম পরিচয় জানানোর জন্য মোদি সরকারের কি কোনও নির্দেশিকা আছে? যদি খাবারের গুণাগুণ বিচারের মাপকাঠি হয় দোকানের-মালিক কর্মচারীর নাম প্রকাশ করা, তাহলে কেন লক্ষ লক্ষ খাদ্যপণ্যের প্যাকেটের গায়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মালিকের নাম রাখাটা বাধ্যতামূলক করবে না কেন্দ্রীয় সরকার? সেই দাবি কি তুলবেন যোগী, ধামিরা? আসলে এখানেই পর্দার আড়ালে থাকা আসল সত্যটা বেরিয়ে এসেছে। ভোটের বাজারে মোদির স্লোগান ছিল, ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ।’ অথচ গোটা প্রচারপর্বে সংখ্যালঘু, বিশেষত মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ উগরে দিয়েছেন মোদি-অমিত শাহরা। এখানেও খাতায় কলমে সব দোকান মালিককে নাম লেখার নির্দেশ দিলেও আসলে যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মালিকদের চিহ্নিত করে হিন্দু পুণ্যার্থীদের যেতে ‘সতর্ক’ করা হচ্ছে তা বোঝার জন্য কোনও দূরদর্শিতা থাকার দরকার নেই। আসলে এও একপ্রকার বিভাজনের ইঙ্গিত। জাতপাতের রাজনীতি। ইতিহাস বলছে, প্রায় ৯০ বছর আগে এই একই কৌশল দেখা গিয়েছিল নাৎসি জার্মানিতে। হিটলার একইভাবে দোকান বা সংস্থার মালিকের নাম লেখা বাধ্যতামূলক করে আসলে ইহুদিদের চিহ্নিত করে অর্থনৈতিকভাবে বিপন্ন ও সন্ত্রস্ত করে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন।
এখানেও সেই তারই ইঙ্গিত মিলছে। তিন ডাবল ইঞ্জিনের রাজ্যে এই ফতোয়ায় হাজার হাজার মানুষ কাজ হারিয়ে পথে বসতে চলেছেন। এর মধ্যে শুধু মুসলমান নন, হিন্দুও আছেন। মূলত এই বিশেষ সময়ে যাত্রাপথে বহু মুসলমান পরিচালিত দোকানে হিন্দু যুবকযুবতীরাও কাজ করেন। আবার উল্টোটাও হয়। নির্দেশিকা হাতে পেয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মালিকরা তাঁদের কর্মচারী হিন্দু ভাইদের বলে দিয়েছেন অন্য কোথাও কাজ দেখে নিতে। এই তালিবানি ফতোয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার মুখে কুলুপ এঁটেছে। রবিবার দিল্লিতে সর্বদল বৈঠকে এই প্রসঙ্গ উঠলে কার্যত তা এড়িয়ে গিয়েছেন রাজনাথ সিং, জেপি নাড্ডারা। যদিও আরএলডি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়ন্ত চৌধুরি এবং লোক জনশক্তি পার্টির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগ পাসোয়ান সরকারকে রাজধর্ম পালনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আশার কথা, সুপ্রিম কোর্ট দুই রাজ্য সরকারের দেওয়া নির্দেশিকার উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেছে।