পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক মতান্তর, কলহে মনে হতাশা। কাজকর্ম ভালো হবে। আয় বাড়বে। ... বিশদ
গুজবের টার্গেট হতে দেখা দিখেছে স্বয়ং এক রাজাকেও! ১৭৫০ সালে পঞ্চদশ লুইয়ের নামে লাগাতার শিশু অপহরণের অপবাদ রটেছিল! প্যারিসের রাজপথ থেকে কিছু শিশু সাময়িকভাবে হারিয়ে যেতই গুজব রটে যায় যে, কুষ্ঠ সারাতে রাজা নাকি শিশুদের রক্তে স্নান করছেন! অমূলক আশঙ্কাটি নিয়ে শহরজুড়ে একাধিক সংঘর্ষও ঘটেছিল। চতুর্দশ শতকে ইউরোপসহ একাধিক স্থানে গণহারে ইহুদি এবং খ্রিস্টান নিধনেরও পিছনে সক্রিয় ছিল কিছু গুজব। গত শতকের বিভিন্ন সময়ে ইন্দোনেশিয়া উত্তাল হয়েছিল এক অদ্ভুত গুজবে। কিছু মতলবাজ প্রচার করত যে বড় বড় প্রোজেক্ট কনস্ট্রাকশনের ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে সরকার নাকি মানুষের কাটামুণ্ড ব্যবহার করছে! শুভকাজে মানুষের কাটামাথার গুজব থেকে রেহাই পায়নি আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, এমনকী ইউরোপও। সাম্প্রতিক অতীতে একই গুজব পল্লবিত হয় বাংলাদেশেও। তিনদশক আগের কথা, আরবের একাধিক দেশে রটিয়ে দেওয়া হয় যে শক্তিশালী কামোদ্দীপক চিউইং গাম খাইয়ে ভালো মেয়েদের নষ্ট করা হচ্ছে! তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দোকানগুলির উপর জনরোষ আছড়ে পড়ে। প্রশাসনও কিছু দোকান সিল-সহ বিক্রেতাদের গ্রেপ্তার করে। কিন্তু দীর্ঘ পুলিসি তদন্তে প্রকাশ, যাবতীয় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে গুজবে ভর করে। ভূতুড়ে জাহাজ, ভূতুড়ে বাড়ি, ভুতুড়ে ট্রেন-সহ হাজারো গুজবে ভরে থাকে দুনিয়া।
সব দেখেশুনে মনে হয়, গুজব ছাড়া কিছু লোক যেন জলছাড়া মাছের মতোই নির্জীব। তাই প্রশ্বাস নেওয়ার মতো করেই তারা গুজব আবিষ্কার করে এবং ছড়িয়ে দিয়ে চনমনে থাকতে চায়। যেমন এই মুহূর্তে বাংলার হাওয়ায় ভাসছে ‘ছেলেধরা’ গুজব। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পাড়ার মোড়ের জটলা, নানা স্থানে বাড়ছে চর্চা। স্বঘোষিত বিশেষজ্ঞরা ‘ছেলেধরা’র রোমহর্ষক কাহিনিও ফাঁদছে। এসব ‘কাহিনি’ পুলিস খারিজ করার পরেও কিন্তু গুজব-প্রিয় জনতা নিজের জায়গাতেই রয়ে গিয়েছে। ফলে স্রেফ সন্দেহের বশে ঘটে চলেছে একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা। বারাসত ও অশোকনগরের পর, এবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল বারাকপুরে। মোহনপুর থানার কাঁঠালিয়ার ঘটনটি শুক্রবার রাতের। ঈদের মেলায় গিয়েছিলেন রহড়ার রুইয়া এলাকার এক যুবক। হঠাৎই ‘ছেলেধরা’ দেগে দিয়ে সেখানে তাঁকে বেধড়ক পেটানো হয়। প্রতিক্রিয়ায় কিছু লোক থানায় গিয়ে বিক্ষোভও দেখায়। যুবকটিকে প্রহারের ঘটনায় তিন অভিযুক্তকে পুলিস গ্রেপ্তার করেছে। মারধরের একটি ভিডিও উদ্ধার করেছে পুলিস। তার ভিত্তিতে তদন্তে নেমেছে তারা। শুক্রবারই সন্ধ্যায় অশোকনগরের ভুরকুণ্ডা অঞ্চলে একই পরিস্থিতির শিকার হন মানসিক ভারসাম্যহীন এক তরুণী। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এতেই স্বস্তির কোনও অবকাশ নেই। পুলিসি তৎপরতা আরও বৃদ্ধি কাম্য। খুঁজে দেখা দরকার, এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক মতলব আছে কি না। দেউলিয়া-হয়ে-পড়া একাধিক রাজনৈতিক শক্তিকে নিয়েই ভয়। রাজ্যের শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে রাজনৈতিক নাফা লোটার মতলব আঁটেনি তো কেউ? তাই সুশীল সমাজ এবং সুস্থচিন্তার রাজনৈতিক কর্মীদেরও পাশে নেওয়া দরকার। প্রশাসনের কঠোরতর অবস্থান এবং সকলকে নিয়ে গণচেতনা বৃদ্ধিতেই দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে এই বিপদ।