যে কোনও ব্যবসায় অগ্রগতি আশা করা যায়। মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের কর্মের প্রয়োগ পদ্ধতি নিয়ে সমস্যা হতে ... বিশদ
স্বভাবতই রাষ্ট্রপতি ভবনের তরফে রাজভবনের মতো একটি ‘সুউচ্চ’ প্রতিষ্ঠানে তাঁর নিয়োগে রাজ্য সরকার নিঃসন্দেহে খুশিই হয়েছিল, এবং গণতান্ত্রিক পরিসরে সেটাই ছিল স্বাভাবিক। বোস রাজ্যপাল পদে এসে নবান্ন এবং রাজভবনের মধ্যে সংবিধানসম্মত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ রচনার সদিচ্ছা ব্যক্ত করেন একাধিকবার। অতঃপর, বাংলার ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতিও তাঁর অনুরাগের প্রকাশ ঘটে। এমনকী তিনি দাবি করেন, গড়গড়িয়ে বাংলা বলা শিখতে চান। নবান্নের কর্ত্রীও সেই ডাকে সাড়া দিতে বিলম্ব করেননি। ২৬ জানুয়ারি আমাদের সাধারণতন্ত্র দিবস। ২০২৩-এ আবার সেদিনই পড়েছিল সরস্বতী পুজো। এই জোড়া শুভদিনে রাজভবনের প্রশস্ত লনে বেশ ঘটা করেই হাতেখড়ি হয় রাজভবনের নতুন কর্তার। সরস্বতী পুজো বাংলার বিদ্যানুরাগী সমাজের কাছে একটি পরম আদরণীয় সংস্কৃতি। বোসের নাম-পরিচয়ের ভিতরেও সুপ্ত বঙ্গসংস্কৃতির প্রতি বিশেষ প্রীতি। অতএব, রাজ্যপালের হাতেখড়ি সেদিন বেশ মানানসই মনে হয়েছিল সকলের। কিন্তু অল্পদিনেই খোলসা হয়ে গেল যে, বোস এবং ধনকরে তফাত সামান্যই। বরং বোস রাজভবনকে সামনে রেখে এমন ধারার ‘রাজনীতি’ চালু করলেন যাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্রুত বলতে বাধ্য হলেন যে, ‘এই রাজ্যপাল ধনকরের চেয়েও সাংঘাতিক!’
রাজ্যপাল পদটিকে যতই ‘অরাজনৈতিক’ বলা হোক না কেন, বাস্তবে রাজভবনগুলি যে দিনের শেষে ‘কেন্দ্রের এজেন্টের’ ভূমিকাতেই অবতীর্ণ হয়, তা সকলের জানা। বিশেষ করে যেসব রাজ্যে কেন্দ্রীয় শাসকের বিরোধী কোনও দলের সরকার বহাল, সেখানে এই সংস্কৃতির অনুশীলনে কোনও ফাঁকফোকর রাখা হয় না। বাংলার মানুষ ব্যাপারটা কংগ্রেস জমানায় দেখেছে, মোদিযুগে এসে তাতে হাওয়া লেগেছে আরও জোরদার। কিন্তু এ তো গেল কেন্দ্র-রাজ্য রাজনৈতিক সংঘাতের দিক। বোসের নামে নিন্দেমন্দ সেখানেই সীমিত হলে অবশ্য রাজ্যবাসী অবাক হতো না। কিন্তু কলকাতার রাজভবন আমাদের সকলকে অবাক এবং আহত করল অন্য একাধিক মারাত্মক অভিযোগকে কেন্দ্র করে। একটি অভিযোগে প্রকাশ, রাজভবনের অভ্যন্তরে সেখানকারই এক যুবতী কর্মীর শ্লীলতাহানি ঘটেছে। সেই ঘটনায় যখন সারা বাংলা, এমনকী গোটা দেশেই তোলপাড় চলছে, তখনই সামনে এল আরও মারাত্মক একটি অভিযোগ। দ্বিতীয় অভিযোগটি এক নৃত্যশিল্পীকে ধর্ষণের। দ্বিতীয় ঘটনাস্থল রাজধানী শহর নয়াদিল্লির এক পাঁচতারা হোটেল। দুটি ঘটনাতেই অভিযোগের তর্জনী উঠেছে স্বয়ং রাজ্যপাল বোসের বিরুদ্ধে। ঘটনা দুটির পুলিসি তদন্ত হলেও রাজ্যপাল পদটি সাংবিধানিক রক্ষাকবচ ভোগ করে বলে পুলিসের হাত-পা বাঁধা, তারা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ করতে পারছে না। কিন্তু এমন গুরুতর অভিযোগ ওঠার পর কারও পক্ষেই সাংবিধানিক পদের সুরক্ষা গ্রহণ করা উচিত নয়। রাজ্যপালের কর্তব্য, অবিলম্বে পদত্যাগ করে দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার মুখোমুখি হওয়া। কিন্তু তিনি তাতে অরাজি হলে রাষ্ট্রপতি ভবনের উচিত, অবিলম্বে এমন রাজ্যপালকে বরখাস্ত করা। কারণ এতে একইসঙ্গে রাজভবন, সংবিধান এবং শিক্ষাক্ষেত্রেরও পবিত্রতা নষ্ট হতে পারে। কারণ এখনও পর্যন্ত রাজ্যপালই বাংলার সব রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য।