যে কোনও ব্যবসায় অগ্রগতি আশা করা যায়। মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের কর্মের প্রয়োগ পদ্ধতি নিয়ে সমস্যা হতে ... বিশদ
মোদিরা মেরুকরণের চাল দিয়েছিলেন এবং একইসঙ্গে চেয়েছিলেন বিরোধী ভোট শতধাবিভক্ত করে দিতে। কিন্তু তাঁদের দ্বিতীয় কৌশলটি দিনের আলো দেখতে পেল না, উল্টে মেরুকরণের অস্ত্রেই ঘায়েল হওয়ার পথে এই যুদ্ধবাজ পক্ষ। কেননা, ভোটগ্রহণের দফা যত সপ্তমে এগচ্ছে, মেরুকরণ তত স্পষ্ট হচ্ছে ‘মোদি বনাম বাকিরা’য়! রাজনৈতিক মহল ভুলে যায়নি যে, উনিশের নির্বাচনেই সেরা ফল করেছিল বিজেপি এবং এনডিএ। কিন্তু তারা প্রদত্ত ভোটের ৫০ শতাংশও ঘরে তুলতে পারেনি—বিজেপি এককভাবে মাত্র ৩৭.৩৬ এবং এনডিএ ৪৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। তবু আসন জিতেছিল ঈর্ষণীয় সংখ্যায়—বিজেপি ৩০৩ এবং এনডিএ ৩৫৩! মোদির নেতৃত্বে গেরুয়া অক্ষের এই বিস্ময়কর সাফল্যের পিছনে বিজেপির কৃতিত্বের চেয়ে বেশি অবদান ছিল বিরোধী-অনৈক্যের। ভোট কাটাকাটির খেলাটি মোদিকে যে এতটা ফেভার করবে, সম্ভবত তিনি নিজেও তা ভাবেননি। অভাবনীয় কাণ্ড কি এবারও ঘটতে চলেছে, তবে উল্টো দিক থেকে? এই প্রশ্ন নিশ্চয় পেড়ে ফেলছে বিজেপির মস্তিষ্ককে! প্রবল প্রতাপান্বিত প্রবণতার মাঝেই উপস্থিত একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। কেন্দ্রীয় সরকারের ওই তথ্যই বলছে, দেশে শেষ তিনবছরে নেট গার্হস্থ্য সঞ্চয় একধাক্কায় কমেছে ৯ লক্ষ কোটি টাকা। তার ভিতরে শুধু ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে এই সঞ্চয়ের পরিমাণ গত পাঁচবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। জাতীয় পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি রূপায়ণ মন্ত্রকের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস স্ট্যাটিস্টিকস, ২০২৪ রিপোর্ট দেখে বিরোধীরা চেপে ধরেছে সরকারকে। তাদের সাফ কথা, এই তথ্য প্রধানমন্ত্রীর ‘বিকশিত ভারত’-এর ফানুস চুপসে দিয়েছে। একদিকে জিনিসপত্র অগ্নিমূল্য, অন্যদিকে রোজগার কমেছে গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির। সব মিলিয়ে ঘোরতর আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে বেশিরভাগ মানুষ। জমানোর মতো বাড়তি টাকা থাকছে না তাদের হাতে।
২০২০-২১ অর্থবর্ষে পারিবারিক সঞ্চয়ের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি (২৩.২৯ লক্ষ কোটি টাকা) ছিল। ভাটার টান স্পষ্ট তারপর থেকেই। ২০২১-২২ সালে অঙ্কটি কমে হয় ১৭.১২ লক্ষ কোটি টাকা। পরিমাণটি ২০২২-২৩-এ নেমে এসেছে ১৪.১৬ লক্ষ কোটি টাকায়। গত অর্থবর্ষে জিনিসপত্র ক্রয়বৃদ্ধির হার ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। অথচ পূর্ববর্তী বছরেই সংখ্যাটি ছিল ৬.৮। এর আগে সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ের পরিমাণ সবচেয়ে কম ছিল ২০১৭-১৮-তে। সে-বছরের ১৩.০৫ লক্ষ কোটি টাকার সঞ্চয় পরবর্তী বর্ষে বেড়ে হয় ১৪.৯২ লক্ষ কোটি টাকা। করোনার ঠিক আগের বছরও অঙ্কটি ছিল ১৫.৪৯ লক্ষ কোটি টাকা। লক্ষণীয় যে, করোনার পরই হুহু করে নামছে জনগণের সঞ্চয়ের সামর্থ্য ও পরিমাণ। ২০২৩-এ গার্হস্থ্য আর্থিক সঞ্চয়ের পরিমাণ কমে জিডিপির মাত্র ৫.৩ শতাংশ হয়েছে। পরিমাণটি পাঁচ দশকের ভিতরে সর্বনিম্ন! স্বাভাবিকভাবেই ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা। পারিবারিক ধারদেনার বহর ৭৩ শতাংশ বৃদ্ধির পাশে রয়েছে মাত্র ১৪ শতাংশ সঞ্চয় বৃদ্ধির পরিসংখ্যান। সব মিলিয়ে মোদি জমানায় নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছে আম জনতার। লক্ষণীয় ব্যাপার হল, তবু রুমাল দিয়েই হাতি ঢাকার চেষ্টায় আছেন মোদিবাবু। তিনি স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, ভারত শীঘ্রই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠবে। তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যাক, মোট জিডিপির নিরিখে এই মুহূর্তে ইউএসএ এবং চীনের পরেই আমাদের স্থান। কিন্তু ১৪৪ কোটি ভারতবাসীর মধ্যে ক’জন ‘উন্নত’ পৃথিবীকে চেখে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করবেন? মাথাপিছু আয়ের তুলনা টানার জন্য বাংলাদেশ ছাড়া কাউকেই তো ধারেকাছে পাব না আমরা! এই বিস্ময়ই কি মোক্ষম জবাব হয়ে উঠতে চলেছে বুথে বুথে জাগ্রত ভোটযন্ত্রে?