যে কোনও ব্যবসায় অগ্রগতি আশা করা যায়। মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের কর্মের প্রয়োগ পদ্ধতি নিয়ে সমস্যা হতে ... বিশদ
এই যখন অবস্থা, তখন ওই দল বিজেপির প্রধান মুখ এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সর্বক্ষণ অভিযোগের তর্জনী উঁচিয়ে আছেন বাংলার দিকে। তাঁর দলের কুচোকাঁচা নেতাদের তো বটেই, স্বয়ং মোদিরও অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় এসে ‘সোনার বাংলা’ একেবারে রসাতলে গিয়েছে! একদিকে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে শাসকের রাজনীতি থেকে প্রশাসন যন্ত্র পর্যন্ত সর্বত্র। ওইসঙ্গে যোগ হয়েছে নারীনির্যাতনের ধারাবাহিকতা। সম্ভ্রমলুটসহ নারীনির্যাতনের সর্বশেষ গেরুয়া আবিষ্কারের নাম ‘সন্দেশখালি’। নামটি এমন মনে ধরেছে যে, বঙ্গ বিজেপির শিরোমণি থেকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সকলেই খালি এই নামটিই আওড়ে চলেছেন! বস্তুত অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের ময়দানে মোদি-শাহ-নাড্ডার সৌজন্যে সন্দেশখালিই হয়ে ওঠে ‘জাতীয় ইস্যু’—তীব্র বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, দলিত ও সংখ্যালঘু নিপীড়ন, বিদেশনীতির ব্যর্থতা, গণতন্ত্রহত্যাসহ একগুচ্ছ মারাত্মক সমস্যাকে পিছনে ফেলে। এবছরের একেবারে শুরু থেকেই সন্দেশখালিকেই বঙ্গ রাজনীতির ভরকেন্দ্র করে তোলে গেরুয়া শিবির ও তার দোসর বাম-কং। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রুখে দেওয়ার জন্য এমন হাতে গরম মশলা বাংলা বাজারে কমই মেলে। দেশজুড়ে বিজেপি এবং এনডিএ’র যখন টলোমলো হাল, তখন এই মওকা হেলায় নষ্ট করার শিক্ষা তো দেয়নি সঙ্ঘ পরিবার। অতএব, ক্রমাগত ধার দিয়ে অস্ত্রটিকে জাতীয় রাজনীতির আঙিনায় নিয়ে ফেলল বিজেপি—একেবারে একটি গ্রামীণ সমস্যা হয়ে উঠল রাজধানী নয়াদিল্লিসহ দেশের সমস্ত প্রান্তের ‘হট টপিক’। একটি মূষিককে ব্যাঘ্রের রূপদান, সাম্প্রতিক অতীতে এমনটি কমই দেখেছে দেশবাসী।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মানুষ ভোটের লাইনে দাঁড়াবার আগেই, ৪ মে শনিবার সামনে এল একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনা। নাতিদীর্ঘ ওই ভিডিও অনুসারে, সন্দেশখালির তথাকথিত ‘গণধর্ষণ’ কাণ্ডটি আসলে ‘সাজানো’। চলতি ভোটে সস্তায় বাজিমাত করতেই বঙ্গ বিজেপির ‘নয়নের মণি’র ছক মতো জিনিসটি নির্মিত! কিছু মহিলাকে টাকা দিয়েই এই চিত্রনাট্যের জঘন্যতম রাজনৈতিক রূপদান করা হয়েছে। সে-কথা কবুল করছেন, স্থানীয় এক বিজেপি নেতাই। সোজা কথায়, বিজেপি যে ঘটনাকে বাংলার জননেত্রীর বিরুদ্ধে ‘গণঅভ্যুত্থান’ বলে চালাতে চেয়েছিল, তারই উপরে হয়ে গেল যেন ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’! অতএব, মুহূর্তে হারিয়ে গেল গেরুয়া সেনাপতির যুদ্ধকৌশল—তাঁদের তীব্র ‘আক্রমণাত্মক’ মুখটি বদলে গেল মরিয়া ‘রক্ষণাত্মক’ অ্যাপ্রোচে। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি, রামরাজ্যের রাজাজি, দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সবাই হঠাৎই সন্দেশখালির নাম আর মুখে নিচ্ছেন না। শুধুমাত্র একজনই হম্বিতম্বি চালিয়ে যাচ্ছেন এই দাবি করে যে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ‘জাল’—অতএব তিনি এর শেষ দেখে ছাড়বেন। বলা বাহুল্য, এই ‘হিরো’ই নাকি ওই ভিডিওর মস্তিষ্ক। আপাতত রাজনীতির মঞ্চ ‘সাজানো নাটক’ বনাম ‘সাজানো ভিডিও’ তত্ত্বেই সরগরম। কিন্তু এ কোনও সমাধান নয়। কারণ অভিযোগের কেন্দ্রে বাংলার নারীর সম্মান লুট! এই লুটতরাজ কোন পক্ষ করল, তা পরিষ্কার হওয়া জরুরি। রাজনৈতিক স্বাধীনতার অপব্যহার গণতন্ত্রের শিক্ষা নয়। গণতন্ত্রের পবিত্রতা রক্ষার্থে এবার মুখ খুলুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী দু’জনেই, এমন গুরুতর বিষয়ে নিছক দলীয় রাজনীতির কানাগলিতে লুকিয়ে পড়বেন না।