গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
গণতন্ত্রের চূড়ান্ত লক্ষ্যই হল, সমস্ত ধরনের বৈষম্যের অবসান ঘটানো। ভারতসহ বহু দেশ হাজার সম্ভাবনা সত্ত্বেও ভীষণ পিছিয়ে রয়েছে। তার এক ও একমাত্র কারণ, এসব দেশে নানাভাবে টিকে রয়েছে নানা ধরনের বৈষম্য। আর্থিক, ধর্ম, জাতপাত ও লিঙ্গ ভিত্তিক এবং আঞ্চলিক বৈষম্যই এগুলির মধ্যে প্রকট। কোনও কোনও সময়, কোনও কোনও ক্ষেত্রে বৈষম্যগুলি হ্রাসের বদলে বাড়ছেও। তাই সেগুলি দূর করার চেয়ে বড় কাজ এই মুহূর্তে অন্যকিছু হতে পারে না। তার পরিবর্তে, প্রধানমন্ত্রী মনোনিবেশ করেছেন আনুষ্ঠানিকতায়, জাঁকজমকে। অত্যন্ত এক বিতর্কিত এবং অবাঞ্ছিত পথে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর ওই উপলক্ষ্যেই প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে সেঙ্গোল। মোদি এবং তাঁর বাজনদাররা ভারতের যাবতীয় দুর্দশার মূলে নেহরুকেই চিহ্নিত করে থাকেন। তাঁর অনুসৃত সমস্ত পদক্ষেপ বর্জনকেই তাঁরা মনে করেন, প্রকৃত দেশপ্রেম ও আধুনিকতা। সেই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর স্পর্শ করা ‘ন্যায়দণ্ড’ গ্রহণে নরেন্দ্র মোদির আজকের এই ব্যগ্রতা অনেক কৌতূহল উসকে দেয়। মোদি কি তাহলে নেহরুর জনপ্রিয়তা ও শ্রেষ্ঠতায় ঈর্ষা বোধ করেন? দু’দফার প্রধানমন্ত্রিত্বকালে তিনি কি শুধু ওই একজনকেই ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে চলেছেন! মোদির মনে রাখা উচিত, নেহরুকে ছাপিয়ে যেতে হলে মানুষে মানুষে, সমাজে সমাজে, রাজ্যে রাজ্যে বৈষম্য দূর করার কাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। কিন্তু যে প্রধানমন্ত্রী নিজেকে একজন একনায়ক দেখতেই মরিয়া, তাঁর পক্ষে এ তো সম্ভব নয়। একনায়ক হয়ে ওঠার জন্য তাঁর কৃতকর্মের খতিয়ান সুদীর্ঘ: উগ্র হিন্দুত্বকে প্রশ্রয়, নিপীড়িত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা, ধর্মীয় মেরুকরণ, জাতপাতের বিভাজন, ‘ডাবল ইঞ্জিন’ নামক সোনার পাথরবাটি সামনে রেখে রাজ্যে রাজ্যে বিভাজন ও বঞ্চনা, কংগ্রেসসহ সমস্ত বিরোধী দলের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি, রাজনীতির অঙ্গনকে বিরোধীমুক্ত করে তোলার মরিয়া প্রয়াস প্রভৃতি।
সেই মোদিরই সরকার নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্রাত্য করে রেখেছে দেশের রাষ্ট্রপতিকে। দ্রৌপদী মুর্মু ভারতের প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপ্রধান। মোদিরা গর্ব করে বেড়ান যে, দ্রৌপদী মুর্মু আজ যে ভারতের রাষ্ট্রপতি, সেটা তাঁদেরই সৌজন্যে। একাধিক বিরোধী দল তাঁর মনোনয়নের বিরোধিতা করে বিকল্প মুখের সন্ধানে ছিল। কিন্তু দ্রৌপদী মুর্মুকে দেশের প্রথম নাগরিক করে তোলার এই কি পুরস্কার? নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে সরকার যদি মহতীই মেনে থাকে, তবে তাঁকে অবশ্যই এবং সবার আগে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর গিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসা উচিত ছিল। কিন্তু আয়োজক কর্তৃপক্ষের তরফে আজও তা করা হয়নি। স্বভাবতই প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। ২১টি বিরোধী দল অনুষ্ঠানটি বয়কটেরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। তিন দেশ সফর সেরে বৃহস্পতিবার দেশে ফিরেই বয়কটের খবরটি পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাতে বিরোধীদের দাবি মানার বদলে তাদের কটাক্ষই করেছেন মোদি। ওইসঙ্গে শুনিয়েছেন বিদেশে সরকার এবং বিরোধী পক্ষের সমন্বয়ের বাণী। অন্যদিকে, বয়কটের সিদ্ধান্ত বদলের আর্জিসহ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন হাজির করেছেন প্রধানমন্ত্রীকে ‘গার্ড’ করার মতো কিছু পলকা দৃষ্টান্ত। দিনের শেষে এটাই দাঁড়ায় যে, ইতিহাসে মোদির নাম খোদাই করার এই সুযোগ কোনওভাবে হাতছাড়া করবে না তাঁর ভক্তকুল। তাঁরা পরিষ্কার করে দিলেন, দু-দু’বার প্রধানমন্ত্রিত্বের অন্তিমলগ্নে এসেও গেরুয়া শিবির মোদির এমন কোনও সৎকীর্তি খুঁজে পেল না, মানুষ যেটাকে আজীবন মনে রাখতে পারে। তাই মোদিকেই সংসদের এই অনুষ্ঠানের মধ্যমণি করে তুলতে তারা মরিয়া।