বিমাসূত্রে ধনাগম হতে পারে। প্রেম-প্রণয়ে আনন্দ। কাজকর্মে অগ্রগতি ও সুনাম। ... বিশদ
আসল লক্ষ্য পরের বছরের লোকসভা ভোট হলেও সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, মোদি সরকারের ন’বছরের পূর্তি উপলক্ষেই জনসংযোগ যাত্রার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। রাজস্থানের আজমির পুষ্করে জনসভা করে কর্মসূচির সূচনা করবেন মোদি। তারপরে এক মাসে তিনি অন্তত ছটি জনসভা করবেন। কিন্তু বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ মনে করে, একা মোদিকে দিয়ে আর খেলা জেতা যাবে না। কর্ণাটকে দেখা গিয়েছে, প্রায় ডেইলি-প্যাসেঞ্জারি করেও দলকে জেতাতে পারেননি গেরুয়াশিবিরের প্রধান তুরুপের তাস। তাই হয়তো আর কোনও ঝুঁকি না নিয়ে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ও বিজেপির ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা কর্মসূচিতে অংশ নেবেন বলে মাঠে নেমে গা ঘামাতে শুরু করছেন। পাশাপাশি মোদির ভাবনার উল্টোপথে হেঁটে জাতীয় ও রাজ্যভিত্তিক সাংবাদিক বৈঠকেরও আয়োজন করা হবে। ন’বছরের শাসনকালে মোদি সরকার কী কী কাজ করেছে তার ব্যাখ্যা দেবেন নেতৃত্ব। দূর থেকে নয়, মানুষের কাছে গিয়ে জনসমর্থন আদায়ের এই কর্মসূচির গালভরা নাম দেওয়া হয়েছে, ‘সংযোগ থেকে সমর্থন।’ বিজেপির দাবি, মোদি জমানায় বহু উন্নয়নের কাজ হয়েছে। নানা সামাজিক প্রকল্পে কী বা কত ভালো কাজ হয়েছে জনগণের কাছে তার সরাসরি সাফাই দেবেন নেতারা। বিরোধীদের অভিযোগ, জনসংযোগ যাত্রা সফল করতে বিজ্ঞাপন ও পাঁচতারা ব্যবস্থায় সরকারি কোষাগার থেকে কয়েকশো কোটি টাকা খরচের বিপুল সম্ভাবনা। খবরে প্রকাশ, সোমবার রাতে এক ট্রাক চালকের কেবিনে বসে দিল্লি থেকে চণ্ডীগড় গিয়েছেন রাহুল গান্ধী। যাত্রাপথে দেশের ৯০ লক্ষ ট্রাক চালকের প্রতিনিধিদের ‘মন কি বাত’ শুনেছেন। জনসংযোগের এই ভিন্ন মাত্রাকে কটাক্ষ করে বিজেপি অবশ্য বলছে, এটা সস্তার প্রচার।
কিন্তু প্রশ্ন হল, জনসংযোগ যাত্রায় দেশের মানুষের মনের গভীরে জমে থাকা একরাশ প্রশ্নের উত্তর দেবেন কি শাসকদলের নেতারা? ধরা যাক, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার জন্য বছরে ২ কোটি বেকারের চাকরির প্রতিশ্রুতি, প্রত্যেক নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নগদ ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার ঘোষণা ছিল। দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, ইতিহাস পাল্টে দেওয়া বা বিভাজনের রাজনীতি আর কতদিন, কেন চলবে— সেই প্রশ্ন। মোদি জমানায় রেকর্ড বেকারি, মূল্যবৃদ্ধির কী উত্তর দেবেন গেরুয়া নেতারা? কেন এই আমলে ধনী-গরিবের ব্যবধান আরও বেড়েছে? কেন সরকারের সমালোচনা করলেই রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় নাগরিকদের ফাঁসানো হচ্ছে? কেন বিরোধী নেতানেত্রীদের বশ্যতা স্বীকার করাতে সিবিআই, ইডির মতো এজেন্সিকে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে? কেন কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা তুলে দেওয়ার পরেও সেখানে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়নি? কেন আদানিকাণ্ড বা মেহুল চোকসি, নীরব মোদি, বিজয় মালিয়াদের মতো ‘অভিযুক্তদের’ নিয়ে প্রশ্নেও সংসদে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী? সেই উত্তর পাওয়া যাবে? কেন নোটবন্দির পরেও দেশে কালো টাকার রমরমা কমানো যায়নি? ঘটনা হল, মানুষের দরজায় পৌঁছানোর কর্মসূচিতে এইসব প্রশ্নের সন্তোষজনক কোনও উত্তরই তাঁদের কাছে হয়তো নেই। কারণ ন’বছরের ইতিহাস বলছে, ‘সবকা সাথ বিকাশ’ নয়, মোদি জমানায় কিছু লোকের বিকাশ হয়েছে। আসলে হয়েছে, সবকা সাথ ‘বিশ্বাসঘাতকতা’।