কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
আর এখানেই আফশোস ভারতের স্কুলশিক্ষার দুরবস্থা নিয়ে। সারা দেশে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার স্কুল চলে মাত্র একজন শিক্ষক/শিক্ষিকার ভরসায়। মোটামুটি ৮ শতাংশ স্কুলের এই দুর্দশা। ওয়ান টিচার স্কুলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, বিহার প্রভৃতি রাজ্যে। যে রাজ্যগুলি একসময় ডাবল ইঞ্জিন ছিল অথবা এখনও আছে। ভারত জুড়ে স্কুলশিক্ষার এই দুরবস্থা সবচেয়ে বেশি গ্রামাঞ্চলে। প্রাইভেট স্কুলগুলির সঙ্গে তুলনা করলে সরকারি বা সরকার পোষিত স্কুলগুলিতে যে-মানের শিক্ষা দেওয়া হয়, তা বেশ খারাপ। বিশেষ করে প্রান্তিক অঞ্চলের সরকারি বা সরকার পোষিত প্রাইমারি স্কুলের পড়ুয়াদের অনেকেই সামান্য দুটি অনুচ্ছেদও নির্ভুলভাবে পড়তে শেখে না। লেখা কিংবা অঙ্কেও তারা ভীষণ কাঁচা। এই ধরনের ছেলেমেয়েদের পঞ্চম শ্রেণি পাশ করিয়ে দেওয়া হলেও ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠে তারা চোখে সর্ষে ফুল দেখে। তার উপরে রয়েছে গরিব পরিবারগুলিতে শিক্ষা সম্পর্কে অনীহা। কারণ ছেলেমেয়েদের স্কুলে পড়ানোর বদলে কাজের দুটি হাত হিসেবেই দেখতে পছন্দ করে তারা। এই ধরনের ছেলেমেয়েদের মধ্যে অপুষ্টির অভিশাপও মারাত্মক। দেশ ইতিমধ্যেই করোনা পরিস্থিতি মোটামুটিভাবে কাটিয়ে উঠলেও, স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে করোনার প্রভাব এখনও স্পষ্ট। তাদের একটি বড় অংশ স্কুলছুট হয়ে গিয়েছে। আর যারা স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে, তাদের অনেকেই পূর্ববর্তী ক্লাসের পাঠ ভুলে গিয়েছে। ফলে নতুন ক্লাসের কঠিন পড়াশোনার সামনে অসহায় বোধ করছে তারা। ছেলেমেয়েদের এই পরিস্থিতি থেকে বের করে আনার জন্য স্কুলের বাড়তি উদ্যোগ জরুরি। প্রয়োজনে কিছু ছেলেমেয়েকে বাড়ি থেকে ডেকেডুকেই স্কুলে আনতে হবে। শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পড়ুয়াদের পাশাপাশি তাদের বাবা-মায়েদেরও কাউন্সেলিং করা দরকার হতে পারে। কিন্তু তার জন্য দরকার যথেষ্ট সংখ্যক প্রশিক্ষিত শিক্ষক/শিক্ষিকা। কিন্তু দেশজুড়ে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত এবং শিক্ষাখাতে অনুদার বাজেট বরাদ্দ পরিষ্কার করে দেয় যে, সরকারের এই ব্যাপারে আগ্রহ কম। তারা গাছের গোড়া কেটে আগায় জল ঢেলেই হাততালি কুড়নোর মতলব চালিয়ে যাচ্ছে আজও।
যে-শিক্ষাকে দেশের মেরুদণ্ড নির্মাণের হাতিয়ার মনে করা হয়ে থাকে, সেখানেই আজ দুর্নীতির বাসা। এই প্রশ্নে হরিয়ানা, বাংলা, বিহার, ইউপি যেন একে অন্যের সঙ্গে টক্কর দেয়। শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির অনুপ্রবেশ নিয়ে বিজেপি নেতারা যখন বাজার মাত করতে ব্যস্ত, তখন তাঁদের সাধের ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলির দিকেই বেশি তাকানো দরকার। বিশেষ করে যোগীরাজ্যের দিকে। মোদি সরকার ২০২১ সালে সংসদে জানিয়েছিল, দেশজুড়ে স্কুলশিক্ষকের মোট শূন্যপদের সংখ্যা ১০ লক্ষ ৬০ হাজার। তার মধ্যে উত্তরপ্রদেশেই ১ লক্ষ ১৭ হাজারের বেশি। অথচ, টেট পাশ করে বসে আছেন কয়েক লক্ষ যোগ্য যুবক-যুবতী। তবু ইউপিতে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে টানা পাঁচ বছর! কিন্তু কেন? কারণ হিসেবে উঠে আসছে রকমারি দুর্নীতির অভিযোগ। চাকরি এবং শিক্ষা সংক্রান্ত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস সবচেয়ে বেশি হয়েছে যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে। এর বিরুদ্ধে সেখানে ছাত্র এবং চাকরি প্রার্থীদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ তীব্রতর হচ্ছে। ক্ষোভ-বিক্ষোভ থামাতে ইউপি সরকার প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রাখেনি। সব মিলিয়ে দেশের বৃহত্তম রাজ্যের ল্যাজেগোবরে অবস্থা। অন্যের দিকে আঙুল তোলার আগে বিজেপির নিজের ঘর সামলানো উচিত, নয়তো দেশের শিক্ষার পরিণতি আরও করুণ হবে। জাতীয় শিক্ষানীতি, দিনের শেষে একটি সুবৃহৎ অশ্বডিম্ব ছাড়া আর কিছুই প্রসব করবে না।