গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
কিন্তু প্রশ্ন হল, আইনমন্ত্রী হিসেবে কিরেন রিজিজু এতদিন বিচার বিভাগ, বিচারপতিদের একাংশের সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে যা বলে গিয়েছেন তা কি শুধুই তাঁর ব্যক্তিগত মতামত? এটা বিশ্বাস করা কঠিন। বরং বিশেষজ্ঞদের মতে, যেভাবে নানা অছিলায় ও সাংবিধানিক রীতিনীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আইন বিভাগকে কব্জা করে রাখার চেষ্টা করেছে গেরুয়া বাহিনী, বা সমালোচনা হলেই গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের উপর যেভাবে আক্রমণ নামিয়ে আনছে, সেই একই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বিজেপি চায় দেশের বিচার বিভাগও তাদের স্বাধীনসত্তা ছেড়ে সরকারের বশ্যতা স্বীকার করে চলুন। সাদা কথায়, সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সর্বত্র একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করার চেষ্টা। যেখানে ‘রাজার’ কথাই শেষকথা। হয়তো দাবার বোড়ে হিসাবে কিরেন রিজিজু সেই কাজটাই করছিলেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের কাছে দায়বদ্ধতার কথা ভুলে তিনি যেন বিচার বিভাগকে সবক শেখানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু দলের কাছে একজন তরুণ-তুর্কি নেতার মর্যাদা পেয়ে বেলুনে গ্যাসের মাত্রা বোধহয় একটু বেশিই হয়ে গিয়েছিল। ধীরে সুস্থে, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে যে কাজ করার কথা তা করতে গিয়ে খানিক ‘অর্বাচীনের’ মতো আচরণ শুরু করেন রিজিজু। প্রায় নিত্যদিন বিচার বিভাগ বা বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে আক্রমণ করা যেন তাঁর অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। যদিও তাঁর এমন অখেলোয়াড়চিত আচরণে মোদি-শাহ সহ বিজেপির কোনও নেতা-মন্ত্রীকে কোনওদিন ‘রা’ কাড়তে দেখা যায়নি। তবু রিজিজুকে সরে যেতে হল। কারণ তাঁর আচরণে জনমানসে বিরূপ প্রভাব পড়ছিল। বিজেপির একাংশও তাঁর ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন।
আসলে লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদি সরকারের মেয়াদের শেষ একবছরে অত্যন্ত সতর্ক পদক্ষেপ করতে চাইছে সরকার। বিশেষত কর্ণাটকের ভোটে বিপর্যয়ের পর পায়ের নীচের মাটি সরছে বুঝতে পেরেই বিতর্ক এড়িয়ে চলতে চাইছে গেরুয়া শিবির। দেশব্যাপী বিজেপি বিরোধীধিতার যে আবহ তৈরি হয়েছে তারপর ভাবমূর্তিতে আর দাগ লাগাতে চাইছে না মোদি বাহিনী। চাইছে শীর্ষ আদালতের সঙ্গে সুসম্পর্ক। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, এই কাজে মোদি-ঘনিষ্ঠ কোনও ‘ইয়েস ম্যানকে’ বসিয়ে বকলমে প্রধানমন্ত্রী নিজের হাতে এই দায়িত্বটি রাখতে চেয়েছেন। সেই কারণেই পূর্ণমন্ত্রী না করে স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মেঘওয়ালকে। বিচারপতি নিয়োগসহ বিচারব্যবস্থা নিয়ে রিজিজুর একাধিক বিতর্কিত মন্তব্যকে ঘিরে কেন্দ্রের সঙ্গে বিচার ব্যবস্থার সংঘাতের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তাতে জনমানসে বিরূপ প্রভাব পড়ছিল। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও খারাপ বার্তা যাচ্ছিল। তৈরি হচ্ছিল অস্বস্তিকর পরিবেশ। বিচার ব্যবস্থা ও শীর্ষ আদালতের বিরুদ্ধে এই মোদি সরকার—লোকসভা ভোটের আগে এহেন বার্তা যাতে জনগণের সামনে না যায় তাই এই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ বলে মনে করছেন অনেকে। সেইসঙ্গে রাজস্থানের নেতা মেঘওয়ালকে আইনমন্ত্রী করে মরুরাজ্যের দলিত ভোট টানার কৌশলটিও কাজ করেছে। পাশাপাশি হঠাৎই রদবদল ঘটিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সাড়া ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে প্রধানমন্ত্রী বোঝালেন, এক্তিয়ারের বাইরে গেলে কাউকেই রেয়াত করা হবে না। এতে কাজের কাজ কী হবে বলা শক্ত। তবে লক্ষ্য যে ২০২৪-এর ভোট তা বলার অপেক্ষা রাখে না।