কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
এমন যে হতে পারে সেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনিই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। গত বছরের জুলাই মাসে যোগী রাজ্য উত্তরপ্রদেশের এক অনুষ্ঠানে রাজ্যগুলির ‘দান-খয়রাতি’ বিলির তীব্র সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মতে, কিছু সুবিধা পাইয়ে দিয়ে এটা ভোট কেনার সংস্কৃতি, যা বিপজ্জনক। মোদির ভাষায় ‘রেওড়ি সংস্কৃতি’। ঘটনা হল, তাঁর এই ‘সুবচনের’ পর গুজরাত সহ একাধিক রাজ্যে বিধানসভা ভোটে জিততে দানখয়রাতি বিলানোর প্রতিশ্রুতি দিতে দেখা গিয়েছে বিজেপিকে। মোদির এই ‘রেওড়ি’ সংস্কৃতির সূত্র ধরেই কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির নিজস্ব সামাজিক প্রকল্পে নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ধরা যাক, কন্যাশ্রী বা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, মমতা সরকারের বহুল প্রচারিত ও সফল দুটি সামাজিক প্রকল্প। এইসব প্রকল্পের জন্য খরচের একশো শতাংশই ব্যয় করে রাজ্য সরকার। দুটি প্রকল্পেই উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি সাহায্যের অর্থ পৌঁছে যায়। রাজ্যের এইসব জনস্বার্থবাহী প্রকল্পে কেন্দ্রের এক পয়সাও অনুদান বা সাহায্য নেই। তাই এইসব প্রকল্পের সাফল্য বা ব্যর্থতা নিয়ে দিল্লির কোনও মাথাব্যথা থাকার কথা নয়। তবু এইসব প্রকল্পের যাবতীয় হিসাবনিকাশ জানাতে হবে বলে ফরমান জারি করেছে কেন্দ্র। কেন? দিল্লির কর্তাদের সাফাই, এইসব প্রকল্প চালানোর জন্য রাজ্যের ঘাড়ে কতটাকা ঋণের বোঝা চেপেছে বা চাপতে পারে তার স্পষ্ট আভাস পেতেই নাকি কেন্দ্র হিসাবনিকাশ জানতে চেয়েছে। কিন্তু রাজ্য যে ঋণ নেয় তা সামগ্রিকভাবে সরকার চালানোর ঘাটতি মেটাতে ব্যয় করা হয়। ঋণের অর্থ শুধুমাত্র সামাজিক প্রকল্পের জন্য ব্যয় নাও হতে পারে। তার চেয়েও বড় কথা হল, রাজ্যের হিসাবনিকাশ চাওয়ার অর্থ হল তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা, এক্তিয়ারে নাক গলানো। তাই সঠিকভাবেই রাজ্যের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এই নয়া নজরদারি নির্দেশিকার তীব্র নিন্দা করেছেন।
তবু খানিকটা বাধ্য হয়েই কেন্দ্রের এই অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ মেনে নিতে হচ্ছে নবান্নকে। কারণ, বিভিন্ন খাতে এই মুহূর্তে কেন্দ্রের কাছে এক লক্ষ কোটি টাকার বেশি পাওনা হয়েছে রাজ্যের। দিল্লিতে প্রায় প্রতিদিন দরবার চলছে। এই হকের টাকা না মেলায় প্রবল আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে রাজ্য সরকার। এই অবস্থায় কেন্দ্রের হাতে নতুন করে কোনও ‘অস্ত্র’ তুলে দিতে চায় না নবান্ন। তাই একান্ত বাধ্য হয়েই কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে রাজ্যের প্রকল্পগুলির হিসাবনিকাশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এইসব তথ্য জেনে কেন্দ্রের কী লাভ? ওয়াকিবহাল মহলের আশঙ্কা, আবার হয়তো কোনও শর্ত চাপানো হবে। জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির উপর আবার হয়তো কোনও খাঁড়া নেমে আসবে। সবই জমিদারের ইচ্ছা।