বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
কিন্তু সরকারি কাজকর্মের প্রকৃতি এতটাই জটিল যে দুর্নীতিদমনের চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কিছু হয় না। প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু দুর্নীতিবাজদের শেষ দেখে ছাড়ার হুঙ্কার দিয়েছিলেন। এই প্রশ্নে একরোখা মনোভাব ছিল ইন্দিরা গান্ধীরও। একের পর এক সরকার পাল্টেছে ঠিকই, কিন্তু দুর্নীতি রয়ে গিয়েছে তার জায়গাতেই। তাই উত্তরকালের আর এক প্রধানমন্ত্রীকে (রাজীব গান্ধী) দুর্নীতিরাজের সামনে নিজের অসহায়তাই প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল প্রকাশ্যে! ট্র্যাডিশন যে তারপরেও ভাঙেনি, এই অনুমান ভ্রান্ত নয়। কিন্তু দুর্নীতি এবং অস্বচ্ছতা আছে বলে উন্নয়নের কাজ, মানুষের সেবার কাজ স্থগিত বা বাতিল করা চলে না। কড়া নজরদারির ভিতরেই চালিয়ে যাওয়া দরকার গরিবের উন্নয়নের কর্মসূচিগুলি। যেমন তাদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য বণ্টন, গৃহনির্মাণ, স্বাস্থ্যকর পানীয় জলের সংস্থান, চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ইত্যাদি। নজরদারির নামে এই কাজগুলি নানাসময়ে থমকে গেলে সার্বিকভাবে দেশকেই পিছিয়ে দেওয়া হবে। মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও ভারত নিম্ন মধ্য আয়ের দেশের পংক্তিতে রয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার, বিশ্ব ব্যাঙ্ক প্রভৃতি সংস্থা আশা প্রকাশ করেছে, ভারত যদি তার উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় গতি আনতে সক্ষম হয় তবে আগামী একদশকের ভিতরে মধ্য আয়ের দেশের স্তরে উন্নীত হতে পারবে।
সব দেশই ‘উন্নত’ বিশ্বের অংশ হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু ভারতের সামনে সেই পথটি এখনও সুদীর্ঘ। অগ্রযাত্রাপথটিকে হ্রস্ব করে আনার উপায় হল গরিবসহ সকলের নিরন্তর উন্নতি। কিন্তু ভারত এই ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিতে পদে পদে ব্যর্থ হচ্ছে। যেমন দুর্নীতি হচ্ছে ধরে নিয়ে মনরেগার কাজ একাধিক রাজ্যে রুখে দেওয়া হয়েছে। গরিব পরিবারের মাথার উপর ছাদের ব্যবস্থা করতে নেওয়া হয়েছে আবাস যোজনা। দুর্নীতির অভিযোগ সামনে রেখে রাজ্য বিশেষের ক্ষেত্রে সেখানেও চলছে দীর্ঘ টালবাহানা। এই অদ্ভুত কেন্দ্রীয় নীতির শিকার পশ্চিমবঙ্গ। খেয়াল করার বিষয় হল, পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘকাল যাবৎ বিরোধী দলের সরকার প্রতিষ্ঠিত। ইউপিএ আমলের থেকে নরেন্দ্র মোদির এনডিএ জমানায় চেনা বঞ্চনা মাত্রাছাড়া হয়ে গিয়েছে। একবছর যাবৎ বাংলাকে মনরেগার বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না এবং আবাস যোজনায় বঞ্চিত হচ্ছে লক্ষ লক্ষ গরিব পরিবার। কেন্দ্রের অভিযোগ খণ্ডন করে রাজ্য সরকার বারবার সদুত্তর দেওয়ার পরেও দিল্লি হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। এতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেয়ে মোদি সরকারের রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতার নীতিই প্রকট হচ্ছে বেশি। গরিবের সঙ্গে এই বঞ্চনা যে আরও বড় দুর্নীতি, তৎসহ অপদার্থতাও এই বোধ দিল্লির আর কবে হবে?