কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
১ হাজার টাকা। হ্যাঁ, মাত্র এক হাজার টাকা। এরাজ্যের বহু গুরুত্বপূর্ণ রেল প্রকল্পের জন্য মোদি সরকারের বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ মাত্র হাজার টাকা! রাজ্যের কোথাও নতুন লাইন পাতা, কোথাও ডাবলিং, আবার কোথাও পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য এইভাবে সামান্য অর্থ বরাদ্দ করে বহু প্রকল্পকে কোমায় রেখে দেওয়া হয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বাংলার জন্য যেসব রেল প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন, মূলত সেগুলির জন্যই এই নামমাত্র বরাদ্দ জুটেছে। অনেকক্ষেত্রে আবার গতবারের চেয়ে বরাদ্দ কমেছে। কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। লক্ষ্মীকান্তপুর-নামখানার নতুন রেল লাইন প্রকল্পে গতবার ২৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। এবার তা ১০ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। তারকেশ্বর-মগরা এবং তারকেশ্বর ফুরফুরা শরিফ নতুন লাইনের জন্য বরাদ্দ মাত্র এক হাজার টাকা। কালিয়াগঞ্জ-বুনিয়াদপুর নতুন লাইনের বরাদ্দও নামমাত্র। আবার নিউ গড়িয়া রেল টার্মিনাল নির্মাণের জন্য গতবার ১.২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও এবার জুটেছে মাত্র এক হাজার টাকা। বোলপুর রেল মিউজিয়াম নির্মাণের জন্য বরাদ্দও ওই হাজার টাকা। নিউ আলিপুর-আক্রা ও বজবজ- পূজালি ডাবলিংয়ের জন্য গতবারের বরাদ্দ কমে হয়েছে নামমাত্র। সোনারপুর-ক্যানিং ডাবলিংয়ের জন্য গতবারের ৫০ কোটির বরাদ্দ এবার নেমেছে এক হাজার টাকায়। একইভাবে লিলুয়া-ডানকুনি-ফুরফুরা শরিফ ডাবল লাইনের জন্য গতবারে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা। এবার এই প্রকল্পের কপালেও জুটেছে ১০ লক্ষ টাকা। এমন আরও বঞ্চনার উদাহরণ ছড়িয়ে রয়েছে বাজেটের ছত্রে ছত্রে। চিনপাই-সাঁইথিয়া গেজ পরিবর্তনের মতো কিছু ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দই হয়নি।
এই সামান্য পরিমাণ বরাদ্দে যে বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির বাজারে জলও গরম হয় না তা ভালোভাবেই জানে কেন্দ্রীয় সরকার। তবু এসব প্রকল্প একেবারে বন্ধ করে দিয়ে গালে কালি মাখতে নারাজ মোদি সরকার। তাই ধিকি ধিকি আগুনের মতো বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। বঞ্চনার এই ইতিহাস অবশ্য মোদি জমানায় সব বছরেই দেখা গিয়েছে। রেলমন্ত্রকের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, যেসব প্রকল্পে খরচ উঠে আসা বা লাভের সম্ভাবনা রয়েছে সেখানেই যথাযথ বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু রেলের মতো সরকারি মন্ত্রক কী করে তার সামাজিক দায়বদ্ধতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে লাভ লোকসানের কথা ভেবে প্রকল্পের বরাদ্দ ঠিক করে সে প্রশ্ন উঠেছে। নামমাত্র বরাদ্দের পিছনে রেলমন্ত্রকের যুক্তি হল, পশ্চিমবঙ্গে নতুন প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের সমস্যা আছে। সমস্যা আইনশৃঙ্খলা নিয়েও। সেইসব খতিয়ে দেখেই বরাদ্দ ঠিক করা হয়েছে। একথা ঠিক, কাউকে জোর করে উচ্ছেদ করে জমি দখল না করা মমতা সরকারের ঘোষিত নীতি। এই নীতি সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু আলোচনার মাধ্যমে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে জমি নেওয়ারও অনেক উদাহরণ আছে। একাধিক রেল প্রকল্পের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে জমি নিতে সমস্যা তৈরি করেছে রেলমন্ত্রক। উপরন্তু যেসব প্রকল্পের বাজেট বরাদ্দ মাত্র এক হাজার টাকা সেই টাকায় আদৌ কোনও কাজ হতে পারে কি না সেই সঙ্গত প্রশ্ন উঠেছে। তাই কেন্দ্রের অভিযোগ যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভিত্তিহীন তা মনে করার সঙ্গত কারণ আছে। আসলে শুধু রেল প্রকল্পই নয়, এই মুহূর্তে ১০০ দিনের কাজ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষতিপূরণের টাকা সহ রাজ্যের ন্যায্য পাওনা কোটি কোটি টাকা আটকে রেখেছে মোদি সরকার। বঞ্চনার এই ধারাবাহিক সরণীতে রেল প্রকল্পের জন্য নামমাত্র বরাদ্দ একটা নমুনা মাত্র।