কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
প্রতিক্রিয়া দেওয়ার আগে ঘরপোড়া নাগরিকরা সতর্কই। তবে বিজেপির নেতা কর্মী ও স্তাবকের দল মুহুর্মুহু বলছেন, ‘মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’! তাঁরা নির্মলার নামে, মোদির নামে ধন্য ধন্য করতে গিয়ে দাবি করছেন, এই বাজেট থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। মধ্যবিত্তকে খুশি করার এই তাগিদ কেন? হ্যাটট্রিক করতে মরিয়া মোদি অনেকদিন যাবৎ বসে আছেন বারুদের স্তূপের উপর। এনডিএ সোনার পাথরবাটিতে পরিণত হয়ে গিয়েছে। ভিতরে ভিতরে রুগ্ন হয়ে পড়েছে বিজেপিও। ঘৃণা, বিভাজন আর আস্ফালনের রাজনীতিই মোদির সোনার তরীকে টলমল করে তুলেছে। মোদির মাথা ইতিমধ্যেই ঝুঁকে পড়েছে সংখ্যালঘু ভোট আকর্ষণের জন্য। কিন্তু শুধু আবেদন নিবেদনে যে এত বড় উদ্দেশ্য হাসিল হওয়ার নয়। বাইরে থেকে জোরদার সাপোর্ট জরুরি। সেইসব মানুষের সমর্থন চাই—সমাজ যাঁদের মান্য করে, যাঁদের কথা সমাজ শোনে, কথার জাদুতে অসংখ্য গরিব ও সাধারণ মানুষকে যাঁরা প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখেন। ভারতসহ সারা পৃথিবীর ইতিহাস বলে, নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যোগ্যতম শ্রেণিটার নাম মধ্যবিত্ত। দায়িত্ব নিলে বিপুল ত্যাগেও কুণ্ঠা রাখে না তারা। মোদি-নির্মলা জুটির নিশানাকে তাই নিখুঁত বলতেই হবে। বাজেট ভাষণের পর থেকেই মধ্যবিত্ত শ্রেণির লাভালাভ নিয়ে শতমুখে লক্ষ কথার কীর্তনের মাহাত্ম্য আসলে এটাই।
কিন্তু সমস্যা হল—এই বাজেট সম্পর্কে যা প্রচার হচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বাস্তবে কি তার ছিটেফোঁটাও পাবে? তাৎক্ষণিক মোহ কাটিয়ে ওঠার পর অর্থনীতির বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, গরিব, বেকার ইত্যাদির কথা বাদই দেওয়া গেল, বাস্তবে এই বাজেট মধ্যবিত্তকেও আলাদা কিছু দেবে না। মানুষকে সবচেয়ে ধাঁধায় রেখেছে ওল্ড ট্যাক্স রেজিম (ওটিআর) এবং নিউ ট্যাক্স রেজিম (এনটিআর)-এর তফাত। রহস্য ভেদে সচেষ্ট একদল বিশ্লেষকের বক্তব্য, যেসব নাগরিক বছরে ৩৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করেন তাঁদের জন্য ওটিআর’ই ভালো। কর প্রদানের জন্য এনটিআর বেছে নিলে তাঁদের বিরাট লোকসান হবে। আর একদল বিশ্লেষক হিসেব কষে দেখাচ্ছেন, অঙ্কটা ৩৫ লক্ষ নয়, ৬০ লক্ষ। কারও কারও মতে, এনটিআর সব স্তরের আয়ের মানুষের জন্যই খারাপ হবে। তাই কর কাঠামোর ‘রেজিম’ নিয়ে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিতে বারণই করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের পরামর্শ, এখনই আপনার ট্যাক্স কনসালট্যান্টের পরমার্শ নিন। সরকার আপাতত দুটো অপশন রেখে দিলেও তার টার্গেট ওটিআর বাতিল করে দিয়ে সবাইকে এনটিআর-এ বাঁধা। সব মিলিয়ে মধ্যবিত্তের ‘খেলাম না ছুঁলাম না, লাগল ভালো’ দশাই হয়েছে! এই হট্টগোলের নীচে যেটা চাপা পড়ে যাচ্ছে সেটা হল, সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ের সুযোগ। যে উন্নয়নশীল দেশে বেশিরভাগ মানুষের জন্য পেনশন ব্যবস্থা বলে কিছু নেই, সরকারি সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা চূড়ান্ত এক প্রহসন মাত্র, সেখানে ব্যক্তিগত সঞ্চয়ই শ্রেষ্ঠ সহায়। মোদি সরকারের এই রহস্যময় বাজেট প্রস্তাব মানুষের সেই মেরুদণ্ডটাই ভেঙে দিল নির্মম হাতে!