রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
শিক্ষা এবং চাকরির ক্ষেত্রে ভয়াবহ দুর্নীতির আর এক সাক্ষী মধ্যপ্রদেশ। ‘ব্যাপম’ নামক ওই কেলেঙ্কারি ২০১৩ সালে উদ্ঘাটিত হলেও তার সূচনা আরও দেড় দশক আগে। এই কেলেঙ্কারির তদন্ত করতে গিয়ে বিস্মিত হয় সিবিআই। দেখা যায়—রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, ডাক্তার, আমলা, সাধারণ সরকারি কর্মী থেকে শুরু করে সমাজের নানা শ্রেণির লোক এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত! এই মামলায় শতাধিক নামী ব্যক্তির সাজা হয় এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বাতিল হয় ৬৩৪ জন ডাক্তারের ডিগ্রি। দৃষ্টান্ত অবশ্য দুটিমাত্র নয়, অগুনতি। বস্তুত ডাঙায় বাঘ আর জলে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করেই এসব জয় হাসিল করছেন কিছু মানুষ। অর্থাৎ শত সহস্র বাধাসৃষ্টির পরেও সব দুর্নীতিবাজ, সব দুর্বৃত্ত বাঁচতে পারছে না। তার পরেও যে দুর্নীতিতে লাগাম পড়ছে না, সেটা পরিষ্কার হচ্ছে নানা রাজ্যে চাকরি কেলেঙ্কারির ভূরি ভূরি অভিযোগে। অবশেষে পশ্চিমবঙ্গও এসে দাঁড়িয়েছে এই দুর্ভাগ্যের সরণিতে। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে রাজ্য-রাজনীতি সরগরম অনেকদিন যাবৎ। কোর্টের নির্দেশে সিবিআই, ইডি প্রভৃতি কেন্দ্রীয় সংস্থা এই মামলার তদন্ত করছে। অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছে হাইকোর্টও। প্রাক্তন এক শিক্ষামন্ত্রীসহ শিক্ষাক্ষেত্রের কয়েকজন ওজনদার পদাধিকারী জেলে পচছেন। তদন্তকারী সংস্থার নিশানায় রয়েছেন আরও কিছু সন্দেহভাজন কেষ্টবিষ্টু। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাঁদের যথেষ্ট হেনস্তাও হচ্ছে।
তারপরেও সমাজটাকে ভীষণই নির্বিকার দেখাচ্ছে! তৃণমূলের যুবনেতা কুন্তল ঘোষের ফ্ল্যাট থেকে ইডি উদ্ধার করেছে ১৮৯ জন টেট পরীক্ষার্থীর ওএমআর শিট এবং অ্যাডমিট কার্ডের প্রতিলিপি। এসব কোনও সুদূর অতীতের ব্যাপার নয়, নথিগুলি মাত্র মাস দেড়েক আগে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার। তাই এই সন্দেহ জাগা অমূলক নয় যে, চাকরি নিয়ে যারা দুর্নীতি করে থাকে তারা আদৌ দমেনি। শিক্ষা নেয়নি সাধারণ মানুষও। ইডির জালে আটকে পড়া কুন্তলকে জেরার সূত্রেই এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। স্বভাবতই রুষ্ট আদালত। শাসকদলের ঘনিষ্ঠ এক অভিনেত্রীর নামও জড়িয়ে গিয়েছে এই কাণ্ডে। পুরো ব্যাপারটি নিয়ে ইডির কাছে হলফনামা তলব করেছে আদালত। প্রতিটি তদন্তকারী সংস্থার উচিত, তদন্তের কাজ নিরপেক্ষতা এবং তৎপরতার সঙ্গে সাঙ্গ করা। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের কাছেও তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা কাম্য। যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অসহযোগিতা করবে, তাদেরকে দালাল কিংবা দালালের দালাল ধরে নিয়ে এগতে হবে তদন্তকারীদের। শিক্ষক নিয়োগ মামলার বিচার বিশেষ দ্রুততার সঙ্গে না-হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষাক্ষেত্র। আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি পূরণযোগ্য কিন্তু শিক্ষার ক্ষতি সর্বার্থে অপূরণীয়, কারণ তাতে আস্ত প্রজন্ম ধ্বংস হয়।