কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
কিন্তু প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। সংখ্যালঘুদের কোণঠাসা করতে হিন্দুদের এককাট্টা করার বেপরোয়া নীতিতে এখন নিজেরাই অশনি সঙ্কেত দেখছে মোদি বাহিনী। পরের বছর লোকসভা ভোট। ইতিমধ্যে দলের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে ১৬০ থেকে ১৮০টি জেতা আসন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। সেই ভাবনায় আরও গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে দলের সর্বভারতীয় সংখ্যালঘু মোর্চার পর্যবেক্ষণ। একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের মূল্যায়নে দেশে সংখ্যালঘুপ্রধান এমন ৬০টি লোকসভা কেন্দ্র আছে যেখানে নাকি বিজেপির জেতার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই। এরমধ্যে বাংলা ও যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশেই ১৩টি করে আসন আছে। সংখ্যালঘু মোর্চার ওই রিপোর্টের পর বিজেপির অনেক নেতাই মনে করছেন, মোদি সরকার সম্পর্কে চরম হতাশ সংখ্যালঘুদের বৃহত্তর অংশ। তাঁরা বিশ্বাস করেন, এই সরকার সংখ্যালঘু বিরোধী। দেশ থেকে সংখ্যালঘুদের তাড়াতে চায়। এমন বিশ্বাস দানা বাঁধার যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণও রয়েছে। মোদি জমানায় দেখা গিয়েছে, দেশের ২৮টি রাজ্যের একটিতেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মুখমন্ত্রী নেই। লোকসভায় বিজেপি রেকর্ড সংখ্যক ৩০৩টি আসনে জিতলেও ওই সাংসদের একজনও মুসলিম নন। গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী বাছাইয়ের সময় সংখ্যালঘুদের গুরুত্বই থাকে না। দেশের নাগরিক হয়েও তাঁদের অনেককেই দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের চোখে দেখা হয়। বিশ্বাসে আঘাত লাগায় তাই মুখ ফেরাচ্ছে সংখ্যালঘু ভোট। এই কারণেই ভোটের ময়দানে সংখ্যালঘু মাটিতে দাগ কাটতে পারছে না বিজেপি। এর মানে, সংখ্যালঘু প্রধান ৩০টি আসন ও কার্যত প্রায় ৩০ শতাংশ ভোটার হারানোর ভয়কে সঙ্গী করে ২৪-এর লড়াইয়ের ময়দানে নামতে হবে মোদি ব্রিগেডকে।
পরিস্থিতিটা ভালোই বুঝতে পারছেন স্বয়ং সর্বাধিকনায়ক। তাই আগেই সরকারের স্লোগানে... সবকা বিশ্বাস শব্দবন্ধ যোগ করেছেন। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে সংখ্যালঘু মন পেতে তৎপর হচ্ছেন মোদি-শাহরা। পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, গোটা দেশেই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় বিজেপি কর্মীদের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন নেতৃত্ব। সংখ্যালঘুদের উন্নতির জন্য মোদি সরকার কী কী করেছে তা তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে। আসলে সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে স্বস্তিতে নেই গেরুয়া শিবির। পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ মোদি সিঁদুরে মেঘ দেখে নিজেই দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে শিক্ষিত মুসলিম নাগরিকদের কাছে যাওয়ার নিদান দিয়েছেন। ভোটের তাগিদে কথাবার্তাও পাল্টে ফেলেছেন নরেন্দ্র মোদি। ‘পাঠান’ সিনেমার নায়িকার পোশাক ও পোশাকের রং নিয়ে বিজেপির একাধিক নেতা-মন্ত্রী কুৎসিত মন্তব্য করলেও, এমনকী শো বন্ধ করার হুমকি দিলেও প্রধানমন্ত্রী কিন্তু এর বিরোধিতা করে ‘পাঠানের’ নাম না করেই এক দলীয় সভায় বলেছেন, সিনেমা নিয়ে কিছু মানুষ অহেতুক মন্তব্য করছেন। কোনও সিনেমা না দেখে আলটপকা মন্তব্য করতে বারণ করেন মোদি। এতেই স্পষ্ট আর কোনও বিতর্ক চান না তিনি। কারণ ভোট বড় বালাই। তাই দলীয় নেতা-কর্মীদের তিনি নিজেই সতর্ক করছেন। আসলে জলের মতো পরিষ্কার যে, সংখ্যালঘুদের কোণঠাসা করতে গিয়ে নিজেদেরই কোণঠাসা অবস্থা বিজেপির। বিভাজনের রাজনীতি ব্যুমেরাং হওয়ার আশঙ্কায় বিজেপি এখন সংখ্যালঘু প্রভাবিত জেলাগুলিতে জনসংযোগ বাড়ানোয় গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু উগ্র হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীরা জাল কেটে কীভাবে বের হবে সেটাই এখন দেখার।